মাগুরায় মাদরাসায় জায়গা দখল করে ইটভাটা, সরিয়ে নিতে আলটিমেটাম

মাগুরার মহম্মদপুরের বড়রিয়া গোপালপুর গরিব হোসেন বারী মিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার জায়গা দখল করে ইটভাটার মালসামগ্রী রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাটাটির নাম হচ্ছে আবর ব্রিকস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মিশে ইটভাটা হওয়ায় ভাটা ও গাড়ির ধুলাবালি, ধোঁয়ায় এবং ভাটায় অবৈধ কাঠের আগুনের কালো ধোঁয়ার দুষণে ছাত্রছাত্রীদের নানা ধরনের ভোগান্তির ক্লাস করতে হয়।

মাঝে মাঝেই অসুস্থও হয়ে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা। এর মধ্যেই চলে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, পড়াশোনা আর খেলাধুলা। এ কারণে অভিভাবকরা অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে অন্য স্কুলে নিয়ে গেছে। আবার অনেক অভিভাবকরা তাদের ছেলেকে মাদরাসায় পাঠাতে ভয় পান।

প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে, বারবার এ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধসহ উচ্ছেদ অভিযান দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই ইট নির্মাণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ভাটা কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি জানতে পেরে মহম্মদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালো গত মঙ্গলবার ভাটায় আবারো অভিয়ান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা ও ভাটা সরিয়ে নিতে এক মাসের আলটিমেটাম দেন।

এলাকাবাসী জানান, এই আরব ইটভাটাটি নব্বইয়ের দশকে মাদরাসার একটু দূরে গড়ে ওঠে। প্রতি বছরই ভাটার কার্যক্রম চলতে থাকে। ভাটার মালিক মেজবাউল ইসলাম এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় আস্তে আস্তে মাদরাসার জায়গা দখল করে ভাটার মালামাল রাখতে থাকেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাবাসী বারবার মানা করার পরও বিষয়টি আমলে নেয় না। এ নিয়ে ভাটার মালিকের সঙ্গে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

তারা আরো বলেন, এই অবৈধ ভাটার কারণে মাদরাসাটির কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে এবং বর্তমানে মাদরাসাটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, বড়রিয়া গোপালপুর গরিব হোসেন বারী মিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা নামে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৪ সালে ৩৬ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদরাসাটিতে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থী ১২২ জন। গত বছর ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ২০০ জন। মাদরাসায় শিক্ষক রয়েছে পাঁচজন। আশপাশের ৫ থেকে ৬ গ্রামের শিশুরা এই মাদরাসায় লেখা পড়া করে। ইটভাটার ধোঁয়া, ট্রাকের ধোঁয়া, গাছের কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়ার কারণে বায়ুদূষিত করছে। ফলে ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, কিছুক্ষণ পর পর ট্রাকসহ ছোটবড় গাড়ির আসা-যাওয়া করে। গাড়ির শব্দ, কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি মুখে লাগে। এসব যান চলাচলের শব্দে কানে তালা লাগে যায়। এ কারণে পিতামাতারা সন্তানদের মাদরাসায় আসতে দিতে চায় না।

আরব ইটভাটার মালিক মেজবাহুল ইসলাম বলেন, মহম্মদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাসুদেব কুমার মালো ভাটায় অভিযান চালিয়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে এবং এক মাসের মধ্যে ভাটা অন্য জায়গায় সরিতে বলেছেন। বর্তমানে ভাটার সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের আরব ইটভাটাটি অনেক পুরনো ও স্থায়ী চিমনির হলেও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। ফলে জেলা প্রশাসনেরও নিবন্ধন নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বলেন, ওই ভাটার পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, এটা আমাদের নজরে ছিলো না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বাআলো/এস

.

Author
লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা
জেলা প্রতিনিধি