দেশের প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী গাইড বই ছাড়া পড়তে পারে না। এ হার সবচেয়ে বেশি মাধ্যমিকে, যা ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৭৯ শতাংশ প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক বই (বাণিজ্যিক গাইড বই) অনুসরণ করছে। এই গাইড বই কেনার পেছনে ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা গড়ে ৬৯৯ টাকা এবং মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা গড়ে দুই হাজার ৬৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনের তথ্য আরো বলছে, দেশের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে নির্ভরতা বেশি ছিলো। শহর ও গ্রামাঞ্চল সব পর্যায়েই এই চিত্র দেখা গেছে। আর অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরিংয়ের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।
শিক্ষা আইনের চূড়ান্ত খসড়ায় নোট-গাইড নিষিদ্ধ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এই বিধান লঙ্ঘন করলে অনুর্দ্ধ তিন বছর কারাদণ্ড বা অনুর্দ্ধ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা করা হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
যতদূর জানা যায়, অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেন। এক দিকে নোট-গাইড কেনা অন্য দিকে কোচিং ফি এসব নানাবিধ অর্থনৈতিক যাতাকলে নিষ্পিষ্ট হচ্ছে দরিদ্র অভিভাবকরা। স্বল্প আয়ের অতি সাধারণ মানুষ আজ শিক্ষকদের আর্থিক লোলুপতার কারণে চিড়ে চেপ্টা হয়ে যাচ্ছেন। একদিকে অভিভাবকদের এই দশা অন্য দিকে শিক্ষকরা কোচিং নামক সর্বকালের সর্ব নিকৃষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন আনন্দ ও বিনোদন। যার কারণে ‘গোল্ডেন এ প্লাস’এর নামে কিছু রোবট বের হচ্ছে।
আমরা বলতে চাই এতদিন গাইড বইয়ের কারবার প্রকাশ্যে চলছে, প্রকাশ্যে বসছে কোচিং নামের যাতাকলও। উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে ঊর্দ্ধতন সকল কর্মকর্তারা বিষয়গুলো জানেন। কিন্তু কেন তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছেন? আমরা মনে করি এ অনৈতিক কারবার বন্ধ না হওয়াটা প্রশাসনের ব্যর্থতা ছিলো। এ ব্যর্থতার গ্লানি থেকে বেরিয়ে আসতে নোট-গাইড ব্যবসা বন্ধে সরকার যে আইন পাস করতে যাচ্ছে তা যেন কার্যকর হয়।