একে একে জন্ম দিলেন ৫ সন্তান, বাঁচানো গেলো না কাউকে

মাদারীপুরের কালকিনি থেকে সন্তানসম্ভবা ফাতেমা আক্তারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয়েছিলো। তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয় অ্যাম্বুলেন্সেই। এরপর একে একে জন্ম নেয় আরো চার সন্তান। তবে বাঁচানো যায়নি পাঁচ নবজাতকের কাউকে।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকার শিশু হাসপাতাল ঘুরে এমন ঘটনার কথা জানা গেছে।

স্বজনরা জানিয়েছেন, ফাতেমা ঢাকায় থাকেন। প্রায় সাত মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তিনি নিয়মিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে চেকআপ করাতেন। সম্প্রতি চিকিৎসক তাকে মানা করেন গ্রামের বাড়িতে যেন না যান। কারণ তার পেটে চার সন্তান রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক। কখন কী হয় সেই আশঙ্কা থেকেই চিকিৎসক এমন পরামর্শ দেন। এরপরও তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন।গতকাল সোমবার রাত থেকে তার পেটে ব্যথা ওঠে। মঙ্গলবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তার প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে সকালে জন্ম নেয়া প্রথম নবজাতকটিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুপুর ১২টার পর তিনি একে একে আরো চারটি সন্তানের জন্ম দেন। তবে কারো অবস্থা ভালো ছিলো না। পাঁচ নবজাতকই ছিলো অপরিপক্ক। আশানুরূপ ছিল না ওজন। ফলে জন্মের পর থেকে তাদের সমস্যা দেখা দেয়। জরুরি ভিত্তিতে তাদের হাসপাতালের এনআইসিইউতে রাখার দরকার ছিলো। কল্যাণপুরের সেই বেসরকারি হাসপাতালে কোনো এনআইসিইউ ছিলো না। তড়িঘড়ি করে তারা শিশু হাসপাতালে আসেন। ইতোমধ্যে আরো দুই সন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর সেখানেও কোনো এনআইসিইউ না পেয়ে পাশে থাকা রেনেসাঁ হাসপাতালে যান তারা। এই হাসপাতালে এনআইসিইউ থাকলেও তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

ঢাকায় ফাতেমার তেমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই। মাদারীপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে এসেছিলেন তার ছোট ভাই। কিন্তু তিনি ঢাকার অনেক কিছুই বোঝেন না। ফাতেমার স্বামী একজন প্রবাসী। মঙ্গলবার বিকেলে শিশু হাসপাতালে তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছিলেন ফাতেমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ফরহাদ হোসেন শাওন। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

ফাতেমার স্বজনরা আরো জানান, তারা কল্যাণপুরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আসার সময় যানজটে পড়েছিলেন। ফলে চার শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এরপর তারা শিশু হাসপাতালে তাদের নিলে অনেক চেষ্টা করেছেন এনআইসিইউতে নেয়ার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটার দিকে জানায়, তাদের পক্ষে এনআইসিইউ দেয়া সম্ভব নয়। এরপর তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারা বিভিন্ন জায়গায় ফোন দেয়া শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত এনআইসিইউ পেলেও নবজাতকদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

তারা আরো জানান, বিকেলে শিশু হাসপাতাল থেকে যখন বেসরকারি হাসপাতালে দুই নবজাতককে নেওয়া হয় তখন তারা কোনোভাবে অ্যাম্বুলেন্সে পাচ্ছিলেন না। এরপর ফাতেমার সঙ্গে থাকা সেই যুবক শাওন জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন দিয়ে দুটি অ্যাম্বুলেন্স পেলেও যানজটে দেরি হয়। ফলে তারা এক রোগীকে নামিয়ে দিতে আসা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছোটেন সর্বশেষ হাসপাতালে। তবে দেরি হয়ে যাওয়ায় নবজাতকদের আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলমের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

স্বাআলো/এসএস

.

Author
ঢাকা অফিস