অধিকারের অপতৎপরতার চিত্র

রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া মামলায় মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে পরিচিত অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানকে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া ১০ হাজার টাকা কারাদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে ৷

জামিনে থাকা দুই আসামি রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির হন। পরে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির মামলার রায় হওয়ায় অধিকার নামক এনজিওটির কার্যকলাপ প্রকাশ নিয়েই এই প্রতিবেদন।

অধিকার একটি মানবাধিকার ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা হিসেবে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংস্থাটি সরকার বিরোধী বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে দীর্ঘদিন থেকেই লিপ্ত রয়েছে। ১৯৯৪ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অধিকার নামক এনজিওটি। আদিলুর রহমান প্রতিষ্ঠিত অধিকার মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করলেও এর প্রধান কাজ হচ্ছে বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে দেশবিরোধী বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালানো।

বলা হয়ে থাকে, অধিকার একটি বাংলাদেশ-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশন (এফআইডিএইচ) এর সদস্য । এটি ২০০৩ সাল থেকে একটি বার্ষিক ক্রিয়াকলাপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। অধিকারের উল্লেখযোগ্য কাজ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের ২০১১ সালের বাংলাদেশ বিশ্ব প্রতিবেদনে প্রকাশ করে।

কিন্তু ১১ নভেম্বর, ২০১৮ সালে জনকণ্ঠ পত্রিকায় বিভাস বারোইয়ের লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যেটাতে অধিকারকে নিন্দনীয় বলে অভিহিত করেছে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে অধিকারকে বাতিল ঘোষণা করা হয়।

জানা গেছে, অধিকার এনজিওটি বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দেয় ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে ঢাকার মতিঝিলে হেফাজত কর্মী সমর্থকদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে নিহতের তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে।

১০ জুন অধিকার এই সংক্রান্ত বিষয়ে এক ফ্যাক্টস এন্ড ফাইন্ডিং রিপোর্ট তাদের ওয়েবসাইটে www.odhikar.org প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয় উক্ত সংঘর্ষে হেফাজতের ৬১ জন কর্মী সমর্থক নিহত হয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ অসঙ্গতি পাওয়া যায়। যেমন: ৫ জন ব্যক্তির নাম একাধিকবার থাকা, ১১টি কল্পিত নাম সংযুক্তকরণ, শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীর নাম তালিকায় সংযুক্তকরণ, ঢাকার বাইরে মৃত্যুবরণ করা ৬ জনের নাম উক্ত তালিকায় যুক্ত করা ইত্যাদি।

উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর উদ্ভূত বিভ্রান্তি দূর করতে তথ্য মন্ত্রণালয় হতে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই তারিখে তথ্য অধিকার আইনের অধীনে ‘অধিকার’ এর নিকট তালিকার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও অধিকার তা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এছাড়া এনজিও ব্যুরোকেও তারা গোপনীয়তার অজুহাতে উক্ত প্রতিবেদনের মূল তথ্যাদি প্রেরণ করেনি। ফলশ্রুতিতে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নং-০১/২০১৩), যে মামলায় আদিলুর রহমান গ্রেফতার হয়ে পরবর্তীতে জামিন লাভ করেন। উক্ত মামলার কার্যক্রম বর্তমানে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে।

স্বাআলো/এসএ

.

Author
ঢাকা অফিস