এস আলম গ্রুপের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ বা মতামত প্রকাশের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গ্রুপটি যে আবেদন করেছিলো, তা নামঞ্জুর করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
এস আলম গ্রুপের বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে তদন্ত করতে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, সেটি স্থগিত চেয়ে গ্রুপটির পক্ষ থেকে যে আপিল করা হয়েছে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো ধরনের সংবাদ ও মতামত প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মঙ্গলবার অবেদন করে শিল্পগোষ্ঠীটি।
বিভিন্ন অনলাইন নিউজ প্ল্যাটফর্ম ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন যেসব ভিডিও প্রচার করেছেন, তা অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিলো এস আলমের আবেদনে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এই আবেদনটি নথিভুক্ত করার সময় চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, আগামী ৮ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আগের লিভ টু আপিলটি শুনানির সময় চাইলে তারা এই আবেদন উপস্থাপন করতে পারবেন।
এস আলম গ্রুপের আবেদনের ওপর শুনানির সময় চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, দুর্নীতির তথ্য পেলে গণমাধ্যম রিপোর্ট করবে, সেটাই স্বাভাবিক। এখানে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুযোগ কোথায়?
তবে প্রকাশিত প্রতিবেদন সত্য না মিথ্যা কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না সেটি বিচার করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম কী রিপোর্ট করবে, কী রিপোর্ট করবে না, সেক্ষেত্রে কি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায়? যায় না। তবে সবারই নীতিমালা মেনে চলা উচিত।
এস আলমের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি আদালতে বলেন, এস আলমের বিষয়ে একটা অভিযোগ এসেছে, যেটা একটা বিরোধপূর্ণ বিষয়। আমাদের মনে হচ্ছে, এস আলম নিয়ে একটা মিডিয়া-ট্রায়াল হচ্ছে। এখন আমার বক্তব্য হলো, মিডিয়া ট্রায়াল চলবে না, কোর্টের ট্রায়াল চলবে।
তখন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, সবাই আমরা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক, বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি এমনটাই দেখে আসছি। কোনো রায় বা আদেশ দিলে একেক পক্ষে একেক রকম ব্যাখা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন মাধ্যমে। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আমরা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। এ কারণে আইনজীবীদের লক্ষ রাখা উচিত, যাতে আদালতের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে, কোনোভাবেই সেটা ক্ষুণ্ণ না হয়। এটা রক্ষার দায়িত্বও বারের আইনজীবীদের।
এর আগে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর সরকারী সংস্থাগুলোকে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে এস আলম গ্রুপের ঋণ পাওয়ার বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেই আদেশটি দিয়েছিলেন।
এরপর গণমাধ্যমে সিঙ্গাপুরে এস আলম গ্রুপের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। প্রতিবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে গত ৫ আগস্ট সিঙ্গাপুরে এস আলম গ্রুপের ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিএফআইই ও সিআইডসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এই আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে লিভ-টু আপিল আবেদন করা হলে গত ২৩ আগস্ট এস আলম গ্রুপের বিদেশে বিনিয়োগ ও অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।
স্বাআলো/এসএ
.
