পিকে হালদারের ফার্মে ২৫০০ কুমির, বিক্রি হলো ৩৮ কোটি টাকায়

ঋণ পরিশোধ না করায় অর্থ আত্মসাৎ ও কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের মালিকানাধীন একটি কুমিরের খামার বিক্রি করেছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।

ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রায় ১৩.৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কুমিরের খামারটি সম্প্রতি এক নিলামে প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় কিনেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উদ্দীপন’।

কোম্পানির মতে, খামারটিতে বর্তমানে প্রায় ২,৫০০ কুমির রয়েছে।

২০০৩ সালে রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে দেশে প্রথমবারের মতো কুমির খামার প্রতিষ্ঠা করেন উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিলো, কুমিরের চামড়া রফতানি করা।

২০১৩ সালে পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা মুশতাকের কাছ থেকে খামারটি কিনে নেন। ২০১৪ সালে খামারটি কুমিরের চামড়া রফতানি শুরু করে।

একজন লেখক হিসেবে পরিচিত মুশতাক আহমেদ ফেসবুকে সরকার-বিরোধী লেখা পোস্ট করার অভিযোগে ২০২০ সালের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেফতার হন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় অভিযুক্তদের একজন পিকে হালদার। জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে, তিনি পলাতক। এ মামলায় আরো ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, আমাদের ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রেপটাইলস ফার্মের নিলাম করা হয়েছিলো। খামারটি অধিগ্রহণের জন্য নিলামের সময় উদ্দীপন সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেয়।

তিনি বলেন, বকেয়া ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও খামারটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বেশ আশানুরূপ একটি দাম।

উদ্দীপনের একজন কর্মকর্তা খামারটি অধিগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমরা বর্তমানে নিলামের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। নিয়ম অনুযায়ী মালিকানা হস্তান্তর করা হবে।

২০১৩ সালে কুমিরের খামারটি অধিগ্রহণের পর পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা কুমির উৎপাদন সম্প্রসারণের জন্য একটি উদ্যোগ শুরু করেন। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫৭.৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এক্ষেত্রে রেপটাইল ফার্মের ১৩.৪০ একর জমি জামানত হিসেবে ব্যবহার করে তারা। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে খামারের নামে এই ঋণ বাড়ানো হয়।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সূত্রে জানা গেছে, ঋণের জামানত হিসেবে ব্যবহৃত বন্ধকী জমির বিক্রয়মূল্য ছিলো ৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বর্তমানে বকেয়া ঋণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা; এটি এখন খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ফার্মের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে পারছিলো না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে খামারে কুমিরের সংখ্যা কমেছে, যা মূলত অব্যবস্থাপনার কারণে কুমিরের খাদ্য ঘাটতি এবং ফার্মের আর্থিক সংকটের সাথে জড়িত।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মশিউর রহমান বলেন, নতুন বোর্ড কাজ শুরুর পর থেকে খাদ্য নিরাপত্তা, নিবিড় পরিচর্যা এবং কুমিরের আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নও করেছে। এছাড়া উন্নত প্রযুক্তিগত পদ্ধতি গ্রহণের ফলে কুমিরের প্রজনন ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

তিনি বলেন, নতুন বোর্ড আসার আগে খামারটিতে ১,৭৩০টি কুমির ছিলো; এখন আছে ২,৪৫৮টি।

স্বাআলো/এসএ

.

Author
ময়মনসিংহ ব্যুরো