বন্ধ হচ্ছে গ্রাহকদের পছন্দের ৩ দিনের ডেটা প্যাকেজ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ৩ সেপ্টেম্বর মুঠোফোনের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে নতুন একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন চূড়ান্ত করেছে। এতে বলা হয়েছে ডেটার ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজ থাকছে না।

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্যাকেজের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৪০টি। আর মেয়াদ হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড (নির্দিষ্ট মেয়াদহীন)। এটি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে একটি জরিপ চালিয়েছিলো বিটিআরসি। গত ৩০ মে প্যাকেজ ও ডেটার মূল্যসংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় ওই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। দেখা যায়, জরিপে অংশ নেয়া ডেটা ব্যবহারকারীদের ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ চেয়েছিলেন ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড, বিদ্যমান পাঁচটি মেয়াদই বহাল থাকুক। অপর দিকে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রাহক ৭, ৩০ ও আনলিমিটেড মেয়াদের প্যাকেজের পক্ষে ছিলেন। সে অনুযায়ী ৩ ও ১৫ দিনের মেয়াদ বাতিল করা হয়।

এদিকে মুঠোফোন অপারেটরদের দেয়া তথ্য বলছে, তিন দিনের মেয়াদের প্যাকেজ সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি না থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অপারেটরদের সূত্রে জানা যায়, দেশে গ্রাহকদের ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ ৩ দিনের মেয়াদ, ১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ ৭ দিনের মেয়াদ, ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ ১৫ দিনের মেয়াদ এবং ১০ দশমিক ১১ শতাংশ ৩০ দিনের মেয়াদ ব্যবহার করে থাকেন।

বাংলালিংক জানিয়েছে, তাদের ডেটার প্রায় ৫০ শতাংশই ৩ দিনের গ্রাহক। তারা ৩ দিনের প্যাকেজে ১ জিবি (গিগাবাইট) থেকে ১০ জিবি পর্যন্ত ডেটা অফার করে। এর দাম ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলালিংকের দাবি, এসব প্যাকেজের গ্রাহকেরা ডেটার প্রায় ৯০ শতাংশ ৩ দিন মেয়াদের মধ্যে ব্যবহার করে থাকেন।

বিটিআরসির জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশি ছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী। স্বল্প আয়ের মানুষ ছিলেন কম। অপারেটররা বলছে, এই স্বল্প আয়ের মানুষেরাই ৩ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করেন বেশি। এ প্যাকেজ বন্ধ হলে গ্রাহকদের খরচ বেড়ে যাবে। তাদের বেশি দামে অন্য প্যাকেজ কিনতে হবে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ৩ দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধ করলে মূলত তরুণ ও স্বল্প আয়ের ব্যবহারকারীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে। দেশের অনেক ব্যবহারকারী মাসব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহার করার সামর্থ্য রাখেন না।

অপারেটররা ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড মেয়াদে সর্বোচ্চ ৯৫টি পর্যন্ত প্যাকেজ প্রস্তাব করেছিলো। তবে বিআরটিসি ৪০টি প্যাকেজে নামিয়ে আনছে। তাদের যুক্তি, গ্রাহক অতিরিক্ত প্যাকেজে বিভ্রান্ত হন এবং তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই সংখ্যা কমানো হচ্ছে। বিটিআরসির জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহক ৪০ থেকে ৫০টি প্যাকেজের পক্ষে। অপর দিকে ৭১ থেকে ৮৫টি প্যাকেজের পক্ষে ছিলেন ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাহক।

তবে অপারেটররা বলছে, গ্রাহকের ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে তারা একই ধরনের ৪ থেকে ৫টি প্যাকেজ দিয়ে থাকে। গ্রাহক সেখান থেকেই তার পছন্দের প্যাকেজ নিয়ে থাকেন। এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। প্যাকেজের সংখ্যা কমে গেলে গ্রাহকের পছন্দের সীমাও কমে যাবে।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বাংলাদেশে এখন অপারেটর ভেদে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। প্যাকেজের সংখ্যা ৪০টি করা হলে তা প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নেয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। গ্রাহকের চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজের সংখ্যা নির্ধারণে কোনো সীমা থাকা উচিত নয়।

স্বাআলো/এসএ

.