ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে ভালো রাখার উপায়

সারা বিশ্বেই ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা এক ভয়াবহ ব্যাধি বলে স্বীকৃত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন লোক বিষণ্নতা ব্যাধিতে ভুগছে, যা তাদেরকে অক্ষমতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশেও দিন দিন বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দুঃখজনক হলো, বিষণ্নতা যে একটি রোগ সেটা অনেকে বোঝে না বা বুঝলেও তা স্বীকার করতে চায় না।

ডিপ্রেশন যে কি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি, যারা এ রোগে ভুগছেন তারাই বোঝেন তারা কোনো কাজ করতে পারেন না, কোনো কিছুতে উৎসাহ পান না, ঠিকমতো কারো সঙ্গে কথা বলেন না, সারা দিন কান্নাকাটি করেন। ভয়াবহ অবস্থা! প্রথমে কেউ বুঝতে পারেন না। দিন দিন অবস্থা আরো খারাপের দিকে নিয়ে যায়। শুধু বিষণ্নতা রোগের কারণে তার নিজের তো বটেই, তার সন্তানদের জীবন পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়।

বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে হলে, প্রথমে বুঝতে হবে বিষণ্নতা কী? কেনো হয়? বিষণ্নতার লক্ষণগুলো কী? যদি একবার নিশ্চিত হতে পারেন আপনার এ রোগ আছে, তবেই না সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা থেকে উপশম পেতে পারবেন।

ডিপ্রেশন কী: ডিপ্রেশন খুবই কমন কিন্তু মারাত্মক এক ধরনের মানসিক ব্যাধি, যা আপনার অনুভূতি, চিন্তাচেতনা ও কাজকর্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা অনেক সময় দুঃখবোধ (Sadness) ও বিষণ্নতাকে (Depression) এক বলে মনে করি। এ দুটি কিন্তু এক নয়। দুঃখবোধ হলো সাময়িক মন খারাপ; যা অল্প কিছু সময় পরই ঠিক হয়ে যায়। এর জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে, ডিপ্রেশন দীর্ঘকালীন সমস্যা। যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ও পরামর্শের প্রয়োজন হয়।

ডিপ্রেশন কেনো হয়: ডিপ্রেশন একটি জটিল রোগ। কেনো এ রোগ হয় নির্দিষ্ট করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কিছু কমন কারণ থাকে, যার জন্য এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

অপমানবোধ: মানসিক বা শারীরিকভাবে অবমাননার স্বীকার হলে অনেকে ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়।

বংশগত প্রভাব: পরিবারে কারো ডিপ্রেশন থাকলে তা অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

জীবন পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন: জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন ঘটলে তা থেকে অনেকে বিষণ্নতায় ভোগে। চাকরি হারালে, অবসরে গেলে, আয় কমে গেলে, জায়গা পরিবর্তন করলে, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে, এমনকি নতুন বিয়ে করলেও অনেকে ডিপ্রেশনের স্বীকার হয়।

কাজের প্রতি অনীহা: শখের কাজগুলোতে আপনি ধীরে ধীরে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। কোনো কাজেই উৎসাহ পাচ্ছেন না। সারা দিন শুয়ে-বসে থাকাকেই মনে হবে সবচেয়ে সহজ কাজ এবং এর বাইরে সব কাজকেই বোঝা মনে হবে। একসময় যে কাজে খুব আনন্দ পেতেন ডিপ্রেশড হয়ে যাওয়ার পর সে কাজে কোনো আগ্রহই খুঁজে পাবেন না।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে রেগুলার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দেখা দেবে। হয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবেন আর নয়তো খাবারে অরুচি দেখা দেবে। ফলে আপনার ওজন দ্রুত বাড়বে বা কমতে থাকবে, যা শরীরে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করবে।

অবসাদ: বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে অবসাদ আপনাকে গ্রাস করবে। তাই যখন দেখবেন আপনি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, কোনো কিছুতেই উৎসাহ পাচ্ছেন না, তখন বুঝবেন আপনি একজন ডিপ্রেশনের রোগী।

সবকিছুতেই মনোযোগের অভাব: বিষণ্নতার ফলে আপনি একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকবেন। কোনো কিছুতেই ঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনতে পারবেন না বা কোনো আলেচনায় অংশ নিতে পারবেন না।

সব বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব: দুঃখবোধ, আশাহীনতা ও হতাশা আপনাকে ঘিরে ফেলবে। সবকিছুতেই নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিতে থাকবে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

রুটিনমাফিক চলা: ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন জীবনকে একটি রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজকর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায়, তবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা: লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিপ্রেশনে যেহেতু কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করে না; তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।

সুষম খাদ্য গ্রহণ: সুষম খাদ্য গ্রহণে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মেলে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকে। সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফলিক অ্যাসিড থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।

আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো: নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোনো কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার মজার বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া। মন ভালো রাখার সবরকম চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো থাকলে ডিপ্রেশন কেটে যাবে একসময়।

স্বাআলো/এস