৮৭ টাকার স্যালাইন ৫০০ টাকায় বিক্রি, রোগীরা বিপাকে

ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়ায় সারাদেশের মতো সিলেটেও এনএস ও ডিএনএস স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। এদিকে, সংকটকে পুঁজি করে কয়েকগুণ বাড়তি দামে স্যালাইন বিক্রি করছেন ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা।

তীব্র জ্বর নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আয়েশা আক্তার। আয়েশার স্বামী রকিবুল হাসান শনিবার বলেন, দুইদিন আগে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসকরা নরমাল স্যালাইন লিখে দেন। কিন্তু হাসপাতালে স্যালাইনটি নেই। হাসপাতাল এলাকার কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও স্যালাইন পাইনি। পরে স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি ফার্মেসি থেকে ৮৭ টাকা দামের এই স্যালাইন ৫০০ টাকা দিয়ে কিনে আনি।

এ রকম অভিযোগ করেছেন আরো একাধিক রোগীর স্বজনরা। প্রয়োজনমতো স্যালাইন না পাওয়া এবং বাধ্য হয়ে ৮৭ টাকার একটি স্যালাইন ৪০০/৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে মাসদেড়েক ধরেই স্যালাইনের সংকট চলছে। নগরের ওষুধের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না স্যালাইন। অভিযোগ রয়েছে, কৃত্রিম স্যালাইন সংকট সৃষ্টি করে একটি চক্র বেশি দামে বিক্রি করছে।

এমন অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার নগরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে অতিরিক্ত দামে স্যালাইন বিক্রির প্রমাণও মেলে। মাত্রাতিরিক্ত দামে স্যালাইন বিক্রির কারণে নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টের সেন্ট্রাল ফার্মেসিকে ১৫ হাজার ও স্কয়ার ফার্মেসিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

স্যালাইন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পর বাজারে নরমাল স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের এই স্যালাইন দিতে হচ্ছে। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুপাতে উৎপাদন করতে পারছে না। নরমাল স্যালাইন (এনএস) তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের সংকটের কথাও জানিয়েছেন তারা।

দেশের বাজারে মূলত নরমাল স্যালাইনের যে চাহিদা রয়েছে, তার সিংহভাগ জোগান দেয় লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক রাইসুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে কোম্পানি থেকে যে স্যালাইন তৈরি হচ্ছে, তা দিয়ে সারা দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে।

চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন না পাওয়ার কথা জানিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার সীতা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী গোপাল চন্দ বলেন, সিলেটে চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানিগুলো স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছে না। এতে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। নরমাল ৮৭ টাকার স্যালাইন কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ দোকানিরা না পেলেও নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ব্যবসায়ীর কাছে স্যালাইনের মজুত রয়েছে। তারা কোম্পানি থেকে সরাসরি কিনে নিচ্ছে। পরে বাজারে সংকট তৈরি করে অধিক দামে বিক্রি করছে। তাই সাধারণ দোকানিরা স্যালাইন সরবরাহ পাচ্ছে না। ক্রেতারা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে। অনেকেই রোগীর জন্য জরুরি প্রয়োজনে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও স্যালাইন পাচ্ছে না।

যদিও স্যালাইনের সংকট নেই বলে দাবি করেছেন সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত। তিনি বলেন, বাজারে নরমাল স্যালাইনের সংকট নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে।

তবে সংকটের কথা স্বীকার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সারাদেশেই নরমাল স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। সেই প্রভাব সিলেটেও পড়েছে। এদিকে মাঝখানে সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে গিয়েছিলো, সে সময় চিকিৎসাসেবা দিতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। আর গত সপ্তাহে সিলেটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আসা রোগীদের প্রচুর পরিমাণে স্যালাইন লেগেছে। কোনোরকমে চলতে হচ্ছে আমাদের। রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী স্যালাইন দিতে পারছি না। তবে আশা করছি এ সপ্তাহে সংকট কিছুটা কাটবে।

সিলেট মহানগরের জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, মানুষের সংকটকে পুঁজি করে একশ্রেণির মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসা করতে চাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার অভিযান অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন ফার্মেসিতে বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করা হচ্ছে। কয়েকটি ফার্মেসি স্যালাইন নাই বললেও তল্লাশি চালিয়ে স্যালাইন মিলেছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়া নগরের যেসব ফার্মেসিতে স্যালাইন রয়েছে সেগুলোতে ‘এখানে নরমাল স্যালাইন পাওয়া যায়’ এমন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।

স্বাআলো/এসএ

.

Author
সিলেট ব্যুরো