ভৈরব নদ সংস্কারের পর শহরে কেনো জোয়ার ভাটা আসছে না তা নিয়ে আলোচনা হয় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়। ১৭ সেপ্টেম্বর এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভৈরব ঘিরে গৃহীত কোনো প্রকল্পই দৃশ্যমান হচ্ছে না। খনন শেষে নদ পাড়ের দেড় কিলোমিটার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি। এখাতে ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিলো। দুইবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। এখনো ২০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য সময় বৃদ্ধি ও আরো এক কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২০২১ সালে ৩০ জুনের মধ্যে পুরো খনন কাজ শেষ হবার কথা। এ জন্য বরাদ্দ করা হয় ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। খনন প্রকল্পের মূল অঙ্গসমূহের মধ্যে ছিল যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহিরপুর থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার পুনঃখনন, বসুন্দিয়া থেকে আফ্রাঘাট পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ড্রেজিং ও বুড়ি ভৈরবের সাথে মাথাভাঙা নদের সংযোগ স্থাপনের জন্য ৩৩ কিলোমিটার খনন, দায়তলা খালের ২০ কিলোমিটার পুনঃখনন, চৌগাছা খাল, শাহবাজপুরখাল, কাচারিবাড়ি খাল ও সত্যরাম খাল পুনঃখনন।
আশা ছিলো খনন কাজ শেষ হলে প্রাকৃতিকভাবেই স্রোতের টানে নদ গভীর হবে। প্রবাহ থাকায় পলি আর নদের বুকে জমতে পারবে না। সুফল হিসেবে লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও আর্সেনিক বিষক্রিয়া দূর হবে। সেই সাথে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে সুন্দরবনও। ভৈরব পাড়ের এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে। নদটি দিয়ে নৌযান চলাচলের উপযোগী হবে। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে।
ভৈরবের উৎসমুখ মাথাভাঙ্গা থেকে খুলনার শিবসা নদীর খুলনা হার্ডবোর্ড মিল ঘাট পর্যন্ত ভৈরব নদের দৈর্ঘ ১৩৩ কিলোমিটার। সেই থেকে ১৫০ বছর ধরে ভৈরবসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো নদ-নদীতে আর পদ্মার পানি আসতে পারে না। বাঁধের অশুভ প্রভাবে এই এলাকায় জলাবদ্ধতা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, আর্সেনিকের বিষক্রিয়া এবং সুন্দরবন ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিরাশার কথা হলো খনন কাজ শেষ হলেও নদে আজো স্রোতধারা দৃশ্যমান হয়নি। এদিকে ১৩ কোটি ব্যয়ে নদের পাড় সৌন্দর্য্যমণ্ডিত করার যে পরিকল্পনা ছিল তাও দৃশ্যমান নয়। কাজ হয়েছে মাত্র ৮০ শতাংশ।
ভৈরবের পড়শীদের দাবি, নদে প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক। নতুবা যে প্রকল্পই গ্রহণ করা হবে তা হবে হাস্যকর।