এক মাসের ছুটি নিয়ে বছর ধরে অনুপস্থিত শিক্ষিকা, আছেন যুক্তরাজ্যে

ফাইল ছবি

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ৭৯ পূর্ব লামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এক মাসের ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে এক বছর ধরে বসবাসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অনুপস্থিতিতে ক্লাসগুলো নিতে হচ্ছে অন্য শিক্ষকদের। এতে তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলার ৭৯ পূর্ব লামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শারমিন আক্তার লিজা ৩০ দিনের ছুটি নিয়ে বিদেশে যান। সেই ছুটি শেষ হয়ে এক বছর পার হলেও তিনি এখনো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তার চাকরি এখনো বহাল আছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবগত করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা এখনো নেয়া হয়নি।

এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এতে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানায়, বিদ্যালয়ের ১৪১ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ছয়জন। শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদানে হিমশিম খাওয়া বিদ্যালয়টির একজন সহকারী শিক্ষিকা এমন থেকেও না থাকায় তাদের আরো বিপাকে ফেলে দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, শারমিন লিজা মূলত অসুস্থতার অজুহাতে লন্ডনে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি চাকরিও করছেন। এ ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানশিক্ষকসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার অবগত এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও তারাই ম্যানেজ করে রেখেছেন।

এ বিষয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফরিদ খান বলেন, এক শিফটের স্কুলে একসঙ্গেই ছয়টি ক্লাস হয়। আমরা ছয়জন শিক্ষক একটানা পাঠদান করলে শেষের ক্লাসগুলোতে খুব টায়ার্ড বোধ করি। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অফিসিয়াল কাজে স্কুলের বাইরে থাকলে বাকি পাঁচজনে কোনোভাবেই পাঠদান করা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত এই সমস্যার সমাধান আশাকরি।

এ বিষয়ে স্কুলটির প্রধানশিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) হেলেনা বেগম বলেন, লিজা ম্যাডাম গত বছর আগস্ট মাসের ১০ তারিখে এক মাসের ছুটির আবেদন করে ১৫ আগস্ট বিদেশে গেছেন। কিন্তু এখন এক বছর হয়ে গেলো, তার কোনো খোঁজ-খবর নেই। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে একাধিকবার জানানো হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেননি। তবে তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা শারমিন লিজার বাড়িতে গেলে তার মা জানান, লিজা হেড মাস্টারসহ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ছুটি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন গেছে। এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে ফিরবেন। এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষিকা শারমিন লিজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ছুটি নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছি।

চাকরি বহাল থাকায় শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, লন্ডনে যেতে ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়েছে আর তাই চাকরি ইস্তফা দিয়ে আসতে পারিনি। আমার মা সহজ-সরল মানুষ তিনি না বুঝে বলে ফেলেছেন আমি এ বছর দেশে ফিরবো। দু-এক দিনের মধ্যেই আমার বোন অফিসে যোগাযোগ করে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসবে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মীর রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে (ডিপিইও) ছয় মাসের সময় একবার এ বিষয়ে জানিয়েছি এবং এক বছর পার হওয়ার পর পুনরায় জানাই। তিনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা, তা আমি জানি না। তবে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি যুক্তরাজ্যে আছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, আমি গত মাসে শারমিন লিজার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে পেরেছি এবং বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। নিতিমালা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বাআলো/এসএস

.

Author
গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি