খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীগুলোয় অতিরিক্ত পলি জমে চর পড়ছে। এতে মারা যাচ্ছে নদী। পাশাপাশি নদী শুকিয়ে জেগে ওঠা চর ও নদীর পার অব্যাহতভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। কমছে নৌপথও।
এর মধ্যে খুলনা শহরের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে চলা ভৈরব-রূপসা নদীর ২২ কিলোমিটার জায়গায় পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। খুলনা থেকে আগে সক্রিয় নৌপথ ছিলো ২৯টি। নদী মরে যাওয়ায় সেই পথ কমতে কমতে এখন মাত্র চারটিতে ঠেকেছে। খুলনা অঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী ভৈরব।
দৈর্ঘ্য ২৪৮ কিলোমিটার। স্থানীয় অধিবাসী ও নদী সম্পর্কিত বই থেকে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে নদীটি দুটি প্রবাহে ভাগ হয়েছে। একটি ইছামতী নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। আরেকটি শাখা ভৈরব নামে জীবননগর, মহেশপুর, কোটচাঁদপুর হয়ে যশোর অভিমুখী হয়েছে।
এর মধ্যে দর্শনা থেকে নিমতলা ফাঁড়ি পর্যন্ত ভৈরব নদ শুকিয়ে গেছে, সেখানে যে নদী ছিলো তা বোঝার উপায় নেই। যশোরের চৌগাছার তাহিরপুর এসে ভৈরব দুটি ভাগে ভাগ হয়েছে। একটি কপোতাক্ষ নামে সোজা দক্ষিণমুখী প্রবাহ; অন্যটি ভৈরব নামে যশোর-খুলনামুখী হয়েছে। যশোরের বারোবাজার ও শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি প্রায় শুকিয়ে গেছে। শহরের অংশে শুকিয়ে যাওয়া ভৈরব নদ খনন করায় খালের চেহারা নিয়েছে।
যশোর থেকে দক্ষিণে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদে কোনো স্রোত নেই। কালেভদ্রে নওয়াপাড়া পর্যন্ত জোয়ারের পানি ওঠে। ভৈরব নদের উজানে স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় চর জেগে ওঠায় মহেশপুর, কোটচাঁদপুর ও যশোরে অবৈধ দখলদাররা গ্রাস করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। কোথাও কোথাও বাঁধ বা বাঁশের পাটা দিয়ে পুকুর সদৃশ করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। যশোরের বাজার এলাকায় প্রভাবশালী মহল ভৈরবের ওপর স্থাপনা গড়ে তুলেছে। নওয়াপাড়া এলাকায় নদীর দুই কূলের প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকা এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে। এখানে বড় বড় ভবন, গোডাউনসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কোনো কোনো ভবন নদীর প্রায় মাঝ বরাবর গড়ে উঠেছে। এখানে ভৈরব সংকুচিত হয়েছে। নওয়াপাড়া জুটমিল ও ট্যানারি শিল্প গড়ে ওঠায় নদী দিয়ে প্রতিদিন ২০-২৫টি পণ্যবাহী কার্গো ও বার্জ যাতায়াত করে। কিন্তু জোয়ারের সময় ছাড়া চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, খুলনা-নওয়াপাড়া নৌপথের ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে ভাটার সময় নৌ চলাচলের সুবিধার্থে ১৩৩টি স্থানে বাঁশ দিয়ে নির্দেশক দেয়া হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করা নদী দখলদারদের তালিকা অনুযায়ী, ভৈরব নদের মজুদখালী ত্রিমোহনা থেকে রূপসা নদীর লবণচরা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে শতাধিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের জমির বাইরেও নদীর জমি দখলে নিয়েছে।
বিআইডাব্লিউটিএর তথ্য মতে, নৌ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় খুলনা-ঢাকা, খুলনা-বরিশাল, খুলনা-ঝালকাঠি, খুলনা-নারায়ণগঞ্জসহ ২৯টি নৌপথে এরই মধ্যে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ছয়টি পথে নৌ চলাচল করে। এর মধ্যে খুলনা-মদিনাবাদ, খুলনা-নীলডুমুর, খুলনা-জোড় শিং এবং খুলনা-ঘুঘরাকাঠি—এই চারটি পথে নিয়মিত যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে। এ ছাড়া খুলনা-দোয়ানি ও খুলনা-ফোকরা নৌপথে অনিয়মিতভাবে লঞ্চ চলাচল করছে।
খুলনা নৌ বন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী ওয়াকিল নেওয়াজ বলেন, নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ভাটার সময় নৌ চলাচল বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। তাই নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কিছু নৌপথ বন্ধ করেও দিতে হয়েছে।
স্বাআলো/এস