ফোনে অন্যের সঙ্গে হেসে কথা বলায় স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি

কিশোরগঞ্জে স্ত্রী সেলিনা বেগমকে (৪০) হত্যার দায় স্বীকার করে স্বামী ফয়েজ মিয়া জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যের সঙ্গে ফোনে হেসে কথা বলার ক্ষোভ থেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সেলিনাকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহাদাত হোসেন এ তথ্য জানান।

এর আগে পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার সদস্যদের হাতে আটক হন ফয়েজ উদ্দিন।

জানা যায়, ফয়েজ ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে। পেশায় পাদুকা ব্যবসায়ী। সেলিনার বাড়ি একই উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ভাটি কৃষ্ণনগর গ্রামে। বাবার নাম জাহের মিয়া। ২২ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তাদের তিন সন্তান। এর মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই নিজ ঘরে ফয়েজের হাতুড়ির আঘাতে সেলিনার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় পরদিন সেলিনার ছোট ভাই নাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২২ বছর আগে আসামি ফয়েজ উদ্দিনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে সেলিনা বেগমের। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মৃত্যুর আগে সেলিনা বেগম ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। প্রায় সময় সাংসারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। ফয়েজ উদ্দিন পেশায় জুতার তৈরির কারিগর আর এ কারণে সেলিনা বেগম স্বামীকে সহায়তার জন্য নিজেও জুতা তৈরির কাজে সহায়তা করতেন। আগের ক্ষোভে গত ৩১ জুলাই আবারো কথাকাটাকাটি হয় সেই জেরে ঘটনার দিন রাতে হাতুরি দিয়ে সেলিনা বেগমের মাথায় আঘাত করে। এ সময় মাথা ফেটে মগজ বের হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এ সময় বাচ্চাদের কান্না শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে ফয়েজ উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশের খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পরের দিন সেলিনা বেগমের ভাই নাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে ফয়েজ উদ্দিনকে প্রধান অভিযুক্ত করে অজ্ঞাত আরো ২ জনকে অভিযুক্ত করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায় মামলা দায়ের করেন।

পিবিআই জানায়, ২০ আগস্ট মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার উপ-পরিদর্শক (নিঃ) আবু কালামকে। ফয়েজকে ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে ঢাকার লালবাগ থানার নবাবপুর রোডের ক্লাবপাড়া নামক স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

জবানবন্দিতে ফয়েজ উল্লেখ করেন, নিজ বাড়িতেই তার জুতার কারখানা। ঘটনার রাতে ফয়েজ চার ডজন জুতা সেলিনার কাছে নিয়ে এসে কাগজে প্যাকেট করার জন্য বলেন। এই কথা বলে ফয়েজ ঘর থেকে বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পরে এসে দেখেন সেলিনা ফোনে হেসে হেসে কথা বলছেন। তখনো জুতার প্যাকেট করা হয়নি। এতে ফয়েজ ক্ষুব্ধ হন এবং কার সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছিলেন জানতে চান। ফয়েজের ধারণা সেলিনা পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাতে থাকা জুতার তৈরির কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি দিয়ে সেলিনার মাথায় আঘাত করেন।

পুলিশ সুপার (এসপি) শাহাদাত হোসেন বলেন, আদালতে ফয়েজের জবানবন্দির মাধ্যমে মামলাটির অনেকটা অগ্রগতি হলো। এখন চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয়া। আমরা এখন সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বাদী নাহিদুল ইসলাম বলেন, তার বোনের ২২ বছর আগে বিয়ে হয়েছে। ফয়েজ উদ্দিন নিজেই বহু নারীতে আসক্ত ছিলেন। এ নিয়ে তার বোনের সঙ্গে দাম্পত্য বিরোধ ছিলো। প্রায় সময় আমার বোন তার স্বামী ফয়েজ উদ্দিনের হাতে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। অন্য নারীর সঙ্গে কথা বলতে বারণ করলেই নির্যাতন চালানো হতো। তার বোন কখনো অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলতেন না।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা

ঢাকা অফিস: বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে প্রথম...

মণিরামপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন লাভলু

নিজস্ব প্রতিবেদক: ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে যশোরের মণিরামপুর...

প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

ঢাকা অফিস: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯...

‘প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেয়া হবে’

ঢাকা অফিস: তীব্র শীত ও গরম ছাড়াও নানা প্রাকৃতিক...