ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় বাগেরহাটে ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত

জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যা ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ নামে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর এই রিমেল মোকাবেলায় বাগেরহাটের মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের সভাকক্ষে শনিবার (২৬ মে) জরুরি ভিত্তিতে এক প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড়, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস (ইপিজেড), রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ মোংলা বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন সরাসরি ও জুমের মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন।

সভাশেষে ঘূর্ণিঝড়ের ‘রেমাল’ কারণে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বিষয়ে এক মেইল বার্তায় বন্দরের গণসংযোগ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সকল ব্যক্তিবর্গ কর্মক্ষেত্রে অবস্থান করবেন।

পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় `রেমাল’ মোকাবেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত

স্থানীয় সতর্ক সংকেত ৩ পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখা হবে। তবে ৪ নং সতর্ক সংকেত এর পর থেকে মোংলা বন্দরের সকল প্রকার অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। এই মূহুর্তে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়ায় চারটি জাহাজ, বেসক্রিক এরিয়ায় একটি ও জেটিতে দুইটি জাহাজসহ মোট ছয়টি বিদেশি জাহাজ মোংলা বন্দরে রয়েছে। বাণিজ্যিক সকল জাহাজসমূহকে জেটির পার্শ্ব ত্যাগ করে চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে নোঙ্গর করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের নিজস্ব জলযানসমূহকে দুই টায়ারে বিদ্যমান বার্থসমূহে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্দরের জেটি এলাকার অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ও অন্যান্য কার্গোসমূহকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব হতে রক্ষা করতে সিঙ্গেল টায়ারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে বেধে রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল: খুলনায় প্রস্তুত ৬০৪ সাইক্লোন শেল্টার

কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টগুলোকে ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ডে সঠিকভাবে বেধে রাখা হয়েছে। যাতে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। মোংলা বন্দরের আবাসিক এলাকাগুলোতে বসবাসরতদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জরুরি সেবার জন্য আলাদা আলাদা উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। মবকের অভ্যন্তরে অন্যান্য এলাকায় বসবাসরত সকল ব্যক্তিবর্গকে মোংলা বন্দরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরের বিষয়ে সাইক্লোন সেন্টার (ধারণ ক্ষমতা ১০০০ জনের) হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতের পূর্বাভাসের সময়ে সকল ব্যক্তিবর্গকে মাইকিং করে সতর্ক করে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ঘরের দরজা-জানালা শক্ত করে বেধে রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় শুরুর পূর্ব হতে শেষ অবধি এ সংক্রান্ত সকল তথ্য হালনাগাদ ও সমন্বয় সাধনের জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে একটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি ও বন্দরের কার্যক্রম চালু করতে মেডিকেল টিম গঠনসহ ঘূর্ণিঝড়ের কোন জাহাজ/জলযান মবক চ্যানেলে ক্ষতিগ্রস্ত /ডুবে গেলে তা দ্রুত অপসারণের জন্য কয়েকটি স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা আছে। প্রয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্ধার জলযানের সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে।

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, সতর্কতায় উপকূলে মাইকিং

ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে মুরিং বয়ায় থাকা জলযানগুলিকে মবকের টাগ বোট সহযোগিতা করবে। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর জন্য প্রস্তুতি হিসেবে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। বন্দর চ্যানেলকে নিরাপদে রাখার জন্য দেশি কার্গো ও লাইটারেজ গুলোকে চ্যানেলের বাইরে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে মোংলা বন্দরের অবস্থানরত ছয়টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদ ও সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। বন্দরে আমদানিকৃত গাড়ি নিরাপদে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ও আমদানিকারক গনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে ।

এছাড়া বন্দর জেটিতে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের জাহাজ গুলো নিরাপদ অবস্থানে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ঝড় মেকাবেলায় জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে ভিডিও জুমে ভার্চুয়াল একটি জরুরী সভা করেন।

সাগরে লঘুচাপ, ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপ নেবে শনিবার

এছাড়া উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সাধারণ মানুষকে আশ্রয় দিতে জেলার ৩৫৯টি ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে দুই লাখ ছয় হাজার মানুষ। উপকুলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে আড়াই হাজারের অধিক রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে শুকনা খাবার। দূর্যোগ মোকাবেলায় নগদ টাকা ও চাল মজুদ রাখা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে নিরাপদে থাকতে বলা রয়েছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতিমধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। চাল ও নগদ অর্থ মজুদ রয়েছে। জেলার সকল সাইক্লোন সেল্টারগুলো প্রস্তুতি করা হচ্ছে।

দুর্যোগ প্রবন এলাকার জনগনকে সরিয়ে নেয়ার প্রচারনা শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিজড় আঘাত হানার আগেই সবাইকে নিরাপেদ সরিয়ে নেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত করা হয়েছে।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য
Related

সাতক্ষীরায় ২৫ গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন

জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরায়...

মেধাবী শিক্ষার্থী ও চিকিৎসক বন্ধুকে সংবর্ধনা দিলো সারাবাংলা ৮৮

জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: সারা বাংলা ৮৮ (এসএসসি ১৯৮৮ ব্যাচ)...

যশোরে গৃহবধূকে মারপিট, স্বামী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে বিয়ের ১৭ বছর পরে পাঁচ লাখ...

বাগেরহাটে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা দায়ের

জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট: বাগেরহাটের চিলতলমারী উপজেলায় রাস্তায় মটরসাইকেলের গতিরোধ...