পাইকারি বাজারে ব্যাপক দরপতন পেঁয়াজের দামে

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: পেঁয়াজ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে খ্যাত পাবনায় পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন ঘটেছে। ছয়দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা মণের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায়। সুজানগর,সাঁথিয়া,সদরের হাজির হাটে পাইকারি বাজারে এমন দেখা গেছে।

বাজারে দরপতন ঘটার কারণ হিসেবে স্থানীয় কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। এখন সেই পেঁয়াজ বাজারে আসছে।এর সাথে যোগ হয়েছে, কৃষকেরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলতে শুরু করেছেন।

পাবনা সদরের হাজির হাটে প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবারে পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। মঙ্গলবার এই হাটে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় প্রতি মন পাইকারি দরে বিক্রি হয়। সুজানগর উপজেলা সদরে প্রতি রবিবার ও বুধবার পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। গত বুধবার (১৩ মার্চ) এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এর পর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। গেল রবিবার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা হাটেও পেঁয়াজের দরপতনের একই চিত্র। রবিবার এ হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এসব হাটে হতাশ হয়ে অনেক কৃষক দাম না পেয়ে বিক্রির জন্য আনা পেঁয়াজ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।

হাজির হাটের কয়েক পাইকার বলেন, রোজার সময় বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। রোজা শুরু হলে মজুত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে কৃষকেরাও বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন। তাতে দরপতন ঘটে। তারা আরো বলেন, মাঠে থাকা পেঁয়াজ পরিপূর্ণ হতে আরো ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। তার আগেই কৃষকেরা তড়িঘড়ি করে পেঁয়াজ বাজারে তুলছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলি বললেন, পাবনায় মুড়িকাটা জাতের আগাম পেঁয়াজ, অপরটি হালি পেঁয়াজ দুই জাতের আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিলো। উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ টন। এ পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। সাত লাখ ৬০ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এদিকে পেঁয়াজের আকস্মিক দরপতনে কৃষকের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। দাম আরো কমে গেলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।

সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের পেঁয়াজচাষি খবির মিয়া বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত তাদের ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ মণ। তাতে বর্তমান দামে বিক্রি করা গেলে তারা কিছটাু লাভের দেখা পাবেন। লোকসান হবে দাম আরো কমে গেলে। সুজানগর উপজেলার খয়রান গ্রামের কৃষক ফারুক তালুকদার বলেন, গত বছর এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজের ভালো দাম ছিলো। দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় প্রতি মণ বিক্রি হয়েছিলো। কিন্তু এ বছর দাম সেই তুলনায় কম।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, সরবরাহ বেড়ে যায়ায় হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানের দাম চলমান থাকলে কৃষকের লোকসান হবে না।

স্বাআলো/এসআর

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা উধাও, আটক ৩

রাজশাহী ব্যুরো: ১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে পাবনায় অগ্রণী...

তীব্র তাপপ্রবাহ, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

রাজশাহী ব্যুরো: তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ পাবনার জনজীবন। শনিবার (২০...

পাবিপ্রবি ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক

রাজশাহী ব্যুরো: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারভিন সুলতানা...

র‍্যাবের অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের ৮ সদস্য আটক

জেলা প্রতিনিধি, পাবনা: জেলার ঈশ্বরদীর স্টেশন রোড এলাকায় অভিযান...