কর্ণফুলী নদীর ১৮-৩১ মিটার নিচ দিয়ে চলবে গাড়ি, উদ্বোধন এ মাসেই

বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে ৩ মিনিট থেকে সাড়ে ৩ মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পার হওয়া যাবে ৩.৩২ কিলোমিটারের পথ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার নিচে এ টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। 

একের পর মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন তিনি।

চলতি মাসেই দ্বার খুলছে টানেলটির। আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের পরদিন থেকেই যান চলাচলের জন্য উন্মক্ত করা হবে।

এদিকে টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতিও। তৈরি করা হচ্ছে উদ্বোধনী নামফলক। টানেলের দুই প্রান্তকে সাজানো হচ্ছে অপরূপভাবে।

এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ বলেন, যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত মূল টানেল। আগামী ২৮ অক্টোবর এটির উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এখন টানেলের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। টানেলের সুরক্ষার জন্য দুই পাশে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ফাঁড়ির ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ চলছে। টানেল প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে।

তিনি আরো বলেন, টানেলে নিরাপত্তায় ১০০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। টানেলে চলাচলকারী গাড়ির গতিবেগ প্রথম দিকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। পায়ে হেঁটে টানেল পার হওয়া যাবে না। একইভাবে মোটরসাইকেল এবং তিন চাকার যানবাহনও চলাচল করবে না টানেল দিয়ে। নির্ধারিত ওজনের বেশি ভারী যানবাহন এ টানেল দিয়ে চলতে দেয়া হবে না। এজন্য টানেলের প্রবেশমুখে নির্মাণ করা হয়েছে ওজন স্কেল। পরিমাপের পর বেশি হলে ওই যানবাহনকে পার হতে দেয়া হবে না। কোন যানবাহন থেকে কী ধরনের টোল নেয়া হবে তা ইতোমধ্যে নির্ধারণ করে ফেলেছে মন্ত্রণালয়।

পতেঙ্গা টানেল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে টানেল। প্রবেশ পথে নৌবাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। টানেল নির্মাণে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত অন্য কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পতেঙ্গা থেকে টানেলের প্রবেশমুখ পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। যেটি উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রতীক্ষিত টানেলটি উদ্বোধন করবেন। এছাড়া টানেল এলাকাকে সাজানো হচ্ছে মনোরমভাবে। টানেলে দুটি মুখ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় অপরটি আনোয়ারা প্রান্তে। দুই প্রান্তে দূর থেকে একনজর দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পটি পরিদর্শন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন পতেঙ্গা প্রান্তে টানেল এর উদ্বোধন করা হলেও আনোয়ারা প্রান্তে হবে সুধী সমাবেশ। এতে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন।

মুখ্য সচিব আরো বলেন, এ টানেল শুধু দুই পাড়কে সংযুক্ত করেনি, ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্ট তা বাস্তবায়িত হয়েছে। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটারের টানেলটি তিন মিনিট থেকে সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পার হওয়া যাবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার নিচে এ টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে। এটার সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আবদুল মালেক বলেন, টানেল এর ভেতর অত্যাধুনিক ফায়ার সিস্টেম রয়েছে। পুরো টানেল মনিটরিংয়ের জন্য একটি কন্ট্রোল রুম রয়েছে। সেখান থেকে টানেলের ভেতর কী হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। টানেলের ভেতর অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তা কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ আছে। বেশি হলে তখন ফোর্স নিয়ে ভেতরে যেতে হবে। কোনও যানবাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কীভাবে সেটি উদ্ধার করা হবে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ২ অক্টোবর টানেলে চূড়ান্ত মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। আমরা কীভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ করবো এবং কীভাবে দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন উদ্ধারে সহযোগিতা করবো তা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, টানেল প্রকল্পের দুই পাড়ে দুটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনের ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন হলে কর্মকর্তা-সদস্য মিলে ৩৫ জন থাকবে। দ্বিতীয় শ্রেণির হলে থাকবে ২২ জন।

এদিকে টানেলের এক প্রান্তে (পতেঙ্গা) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এরিয়া এবং অপর প্রান্ত (আনোয়ারা) জেলা পুলিশের সীমান্ত। সে অনুযায়ী টানেলের অর্ধেক সিএমপির এবং অর্ধেক জেলা পুলিশের অধীনে। সিএমপি এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দুই পাড়ে থানা প্রয়োজন। তবে টানেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ফাঁড়ির জন্য ভবন নির্মাণ করছে।

সিএমপির এডিসি (পিআর) স্পিনা রানি প্রামাণিক বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল সুরক্ষা দিতে দুই পাড়ে দুটি থানা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতরে এ প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পতেঙ্গা প্রান্তে প্রস্তাবিত থানাটির জন্য ৮১ জন জনবল চাওয়া হয়েছে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

সংসদ সদস্য আনার কলকাতায় গিয়েছেন, এসে পড়বেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে...

সারাদেশে টানা ৩ দিন বৃষ্টি হতে পারে

ঢাকা অফিস: ভ্যাপসা গরমে বৃষ্টি নিয়ে আবারো সুখবর জানালো...

আরেক দফা বাড়লো সোনার দাম

ঢাকা অফিস: দেশের বাজারে আবারো বেড়েছে সোনার দাম। এবার...

সময়ের আগে বাজার ভরে গেছে অপরিপক্ব টক লিচুতে

ঢাকা অফিস: আসি আসি করছে স্বাদে ভরা লিচুর মৌসুম।...