চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ৮ ইউপি সদস্যের

নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাফ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহদাত উল্যাহ সেলিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরিষদের আটজন সদস্য।

সোমবার (৯ অক্টোবর) জেলা শহর মাইজদীর একটি রেষ্টুরেন্টে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নারী ও পুরুষ সদস্যবৃন্দ অভিলম্বে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসন, ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আটজন সদস্যসহ নয়জন সদস্য এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অনাস্তা দাখিল করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম কুদ্দুস উল্লেখ করেন, বিগত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে নতুন পরিষদ গঠিত হওয়ার পর শাহদাত উল্যাহ নিজ উদ্যোগে ট্যাক্স বই ছাপিয়ে চৌকিদারদের মাধ্যমে প্রায় ২৩ লাখ টাকা ট্যাক্স আদায় করেন। কিন্তু ওই টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসেবে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেন। একইভাবে পরিষদের সভার কার্যবিবরণী ছাড়াই নিজ উদ্যোগে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের হোল্ডিং নম্বর থাকা সত্ত্বেও নতুন হোল্ডিং নম্বর প্লেট তৈরি করে তা জনসাধারণের মাঝে বিক্রি করে প্রায় ১৭ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া পরিষদের অনুমতি ব্যতিত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করে নিজস্ব কালেক্টর বাহিনীর মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে প্রায় ৭৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। উল্লেখিত হোল্ডিং নাম্বার প্লেট, হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের কোনো টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসেবে করেননি চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রেড লাইসেন্সের রশিদ বই ছাপিয়ে ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার দোকান হতে ৫০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এছাড়া মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার, করাত কল, প্রভিটা কোম্পানির কাছ থেকে আরো পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন, যা ব্যাংক হিসেবে জমা দেয়া হয়নি। লিখিত বক্তব্যে সদস্যরা অভিযোগ করেন, সরকারি এডিপি, টিআর, জিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কাজে সরকারি বরাদ্দের বিষয়ে কারো সাথে কোনো ধরণের আলোচনা না করে একটি প্রকল্পকে একাধিকবার দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন চেয়রম্যান। তিনি সরকারি ভূমি হস্তান্তর কর নামে পরিষদে যে আয়ের খাত রয়েছে, ওই খাতের প্রায় ৩২ লাখ টাকা পরিষদের কারো সাথে আলোচনা না করে খরচ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যদের অভিযোগ, কর্মসংস্থান কমসূচির অধীন ৪০ দিনের কর্মসূচি, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণেও ৯০ শতাংশ নিজের কাছে রেখে নিজস্ব লোকজনের মাঝে বিলি করেছেন। এ ছাড়া তিনি পরিষদের সদস্য ও সদস্যাদের দাখিল করা কোনো প্রকল্প ও কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে কোনো ধরণের আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্তে সকল কাজ করেন, যা স্থানীয় সরকারের নীতিমালা পরিপন্থী। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান পরিষদের ১২ জন সদস্যের সবাই তার বিরুদ্ধে গেলেও কিছু হবে না বলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অপর সদস্যরা হলেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য আয়েয়া বেগম, রুমি আক্তার, সদস্য নাছির, আহসান উল্যাহ, আবুল কালাম আজাদ, হানিফ শেখ ও আবুল বাসার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান শাহদাত উল্যাহ বলেন, একটি মহলের ইন্ধনে পরিষদের সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। আমি কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা সরকারি অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত না। সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও ভিত্তিহীন। পরিষদের সকল সিদ্ধান্ত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নেয়া হয়।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

নোয়াখালীতে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে...

ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় শিক্ষকের দুই হাত ভেঙে দিলো কিশোর গ্যাং

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার কোম্পানীগঞ্জে শ্রেণি কক্ষে ঢুকে ৬ষ্ঠ...

ফেসবুকে অশ্লীল ছবি ছড়ানোর প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়ালেন এলাকাবাসী

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের উত্তর...

উপজেলা নির্বাচনের ৩ দিন আগে চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী: জেলার সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তিনদিন...