পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে জান্তা বাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাখাইনে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে দাবি করেছে জান্তাবিরোধী সশন্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনের আরাকান আর্মি জানিয়েছে, তারা রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তের কাছের শহর পুন্নাগুনে জান্তা বাহিনীর হেডকোয়ার্টার দখলের কাছাকাছি রয়েছে। রাজধানী সিত্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান জান্তা সরকারের লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি) ৫৫০-এর প্রধান ঘাঁটি। সম্প্রতি এ ব্যাটালিয়নকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে বিদ্রোহীরা। এছাড়া দ্রুতই এ ব্যাটালিয়নকে পরাস্ত করে এর সদর দফতরে দখলে নেয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এই শহরে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে আরাকান আর্মি। পুন্নাগুনে শহর কেন্দ্রীয় রাজধানী ইয়াঙ্গুন আর আরাকানের রাজধানী সিত্তের সংযোগ সড়কে অবস্থিত। সেখানে বেশ আটঘাট বেঁধেই জান্তা বাহিনীও আরাকান আর্মিকে প্রতিরোধের করতে নামে। কিন্তু, বাস্তবে হয়েছে উল্টো।

আরকান আর্মি বলছে, তারা এলআইবি ৫০০-এর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে। রাজধানীর আমিইন্ট কিয়ুন গ্রামের কাছে জান্তার দুটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দিয়েছে।

এ ছাড়া আরাকান আর্মি গত বৃহস্পতিবার পোন্নাগাউনের এলআইবি সদর দফতরের কাঠে একটি থানা দখল করে নিয়েছে। আরাকান আর্মি দাবি করেছে, থানাটি দখলের পর অন্তত ২৩ পুলিশ সদস্য তাদের বাহিনীতে যোগ দিয়েছে।

এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইরাবতীকে বলেন, থানায় পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নেই। এ ছাড়া আমাদের বদলিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য আমরা বিদ্রোহী বাহিনীতে যোগ দিয়েছি।

২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স (পিডিএফ)। পিডিএমভুক্ত তিন গোষ্ঠী ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এই সংঘাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই তিন গোষ্ঠী একত্রে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামেও পরিচিত।

গত প্রায় চার মাসের সংঘাতে মিয়ানমারের অন্তত ৪০টি শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ শান প্রদেশসহ অন্তত পাঁচটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে পিডিএফ। আর এবার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশ দখলের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে দাবি করেছে আরাকান আর্মি।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপরই দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনে নৃশংস পদ্ধতি বেছে নেয় জান্তা। তাদের নিপীড়ন-নির্যাতন ও হামলায় অন্তত সাড়ে চার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। বন্দী করা হয়েছে ২৫ হাজার মানুষকে। জান্তা বাহিনীর নৃশংস হামলায় মিয়ানমার জুড়ে অন্তত ৭৮ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।

গত শুক্রবার (১ মার্চ) জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার পরিষদে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে অস্ত্র, বিমানের জ্বালানি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেয়ার আহhfb জানিয়েছেন।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে রিট

ঢাকা অফিস: পরিবেশ রক্ষায় রাজধানী সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধের...

যশোর ও খুলনা ছাড়া বাকি সব জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে

ঢাকা অফিস: যশোর জেলা ও খুলনা বিভাগ বাদে দেশের...

মালয়েশিয়ায় অবৈধ ১০ বাংলাদেশি আটক

প্রবাস ডেস্ক: মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে ১০ বাংলাদেশিসহ ৩০ অবৈধ অভিবাসীকে...

‘প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেয়া হবে’

ঢাকা অফিস: তীব্র শীত ও গরম ছাড়াও নানা প্রাকৃতিক...