রাত পোহালেই বাগেরহাটের দুই উপজেলায় ভোট

আজাদুল হক, বাগেরহাট: রাত পোহালেই চলমান ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর বুধবার দিনব্যাপী প্রথম ধাপের নির্বাচন বাগেরহাট জেলায় সদর উপজেলা বাদে বাকী কচুয়া ও রামপাল উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে।

এ দুই উপজেলায় নির্বাচন শতভাগ সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসনসহ নির্বাচন পরিচালনায় নিয়োজিতরা ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীরা নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী সোমবার দিনগত রাত ১২টা থেকে সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাতজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

কচুয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বাগেরহাট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফী জেমস, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপ-নির্বাচনে আসা বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কেএম ফরিদ হাসান এবং উপজেলা রাঢ়িপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবু।

বাগেরহাটে আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ, নারীসহ আটক ১০

প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ পরিচয় তুলে ধরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সকল ধরনের প্রচারণা করেছেন। কচুয়া উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৯ হাজার ৬৯১ জন এবং এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৪ হাজার ৭৬৪ জন এবং নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৭ জন।

এদিকে রামপাল উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম জামিল হাসান ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল মান্নান ভোট প্রতিযোগিতায় রয়েছেন।

রামপাল উপজেলায় পুরুষ ৬৮ হাজার ৬১২ জন এবং নারী ভোটার ৬৯ হাজার ৬৯১ জন। তবে নির্বাচন বিষয়ে সাধারন ভোটারদের সাথে কথা বলতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাধারণ ভোটার বলেন, উপজেলা নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন পর একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গ্রামে গ্রামে একটা উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ দলীয়। ভাল মন্দ সব ধরনের প্রার্থীকে মাঠে দেখছি।

এদের মধ্যে যারা যোগ্য আমরা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো।ধারনা করা হচ্ছে কচুয়া উপজেলায় চারজন প্রার্থীর মধ্যে মুল প্রতিযোগিতা হবে মীর জায়েসী আশরাফী জেমস ও চলমান চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ারের মধ্যে। যদিও দলের একেক নেতা একেক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এতে দলের ভেতরে আভাস পাচ্ছি। নির্বাচনকে ঘিরে সংঘাত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সংঘাত এড়াতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহবান জানান এ সব ভোটাররা।

চেয়ারম্যান প্রার্থী মীরজায়েসী আশরাফী জেমস বলেন,পাারিবারিকভাবে আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। নির্বাচনে ব্যাক্তিগতভাবে আমার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। নির্বাচিত হলে জনগনের প্রত্যাশা পুরনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আধুনিক স্মার্ট, পরিচ্ছন্ন উপজেলা পরিষদ গড়ার লক্ষে কাজ করবো।

আমার বিশ্বাস জনগন আমার প্রতি সমর্থন যোগাচ্ছে। তাদের রায়ে আমি নির্বাচিত হব। আমরা যে চারজন নির্বাচনে অংশ নিয়েছি সবাই একই দলের।

নিজেরদের মধ্যে যেনো কোনো কলহ বিবাদ না হয়, এদের মধ্যে যাকে যোগ্য মনে হবে তাকেই ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমা সরোয়ার বলেন, ২০১৪ ও ১৯ সালে জনগনের ভোটে দুইবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এরপর চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় আওয়ামীলীগ থেকে আমাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিলে উপনির্বাচনে আমি নির্বাচিত হই। আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা আমার হয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

এ নির্বাচন বিষয়ে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম ধাপে ৮ মে বাগেরহাটের কচুয়া ও রামপাল উপজেলাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখানে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ ঘরানার। এখানে দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হয়নি। যারা যোগ্য ভোটাররা তাদের বেছে নেবেন। কোনো প্রার্থী যদি দলের নাম বা স্থানীয় সাংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা করে আর তা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, বাগেরহাটের কচুয়া ও রামপাল উপজেলায় আগামী ৮ মে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে কিনা তা দেখতে জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে রয়েছেন। ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ পেশিশক্তি রুখতে একাধিক গোয়েন্দা দল মাঠে কাজ করছে। ভোটের মাঠে কোন প্রার্থী যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাগেরহাট জেলার তিনটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় প্রতিদ্বন্ধী না থাকায় এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে পুণরায় নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

উপজেলা নির্বাচন: যশোরে মাঠে থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় হাজার সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও শার্শা উপজেলায় নির্বাচন...

সাতক্ষীরায় সোনার বারসহ নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে ২৪২...

বাগেরহাটে খোলা মাঠে সার্কাস দেখতে হাজারো মানুষের ঢল

আজাদুল হক, বাগেরহাট: মাথা মাটিতে ঢুকিয়ে, মাথার চুল দিয়ে...

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ

জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম...