শিমুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে নতুন সাজে

প্রদীপ রায় জিতু, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: পাতা ঝরার গান আর কোকিলের কুহুতান। শুরু হয়েছিলো আরো কিছুদিন আগে। এবার সরে গেলো শীতের চাঁদরখানি। চারিদিকে আলো ছড়াচ্ছে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। বাতাসে ভাসছে আনন্দ-আভা। এমন দিনে ভালোবাসার ডাক শুনে জেগে উঠেছে মনপ্রাণ। প্রকৃতি একাকার হবে জাগরণে।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঋতুরাজ বসন্তের শুরুলগ্নেই গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে রাঙিয়ে ফুটছে শিমুল ও পলাশ ফুল। নানা ছন্দে কবি সাহিত্যিকদের লেখার খোরাক যোগায় রক্ত লাল এই শিমুল ফুল।

উপজেলার প্রধান সড়কের হাটখোলা, বলাকা মোড়স্থ বিষ্ণু মন্দির ও মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান প্রাঙ্গণে দেখা মিললো কয়েকটি ফুটন্ত ফুলের রক্তলাল পলাশ-শিমুল গাছ। অন্যদিকে ঋতুরাজ বসন্তে এখন আর হরহামেশাই চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমুল গাছ। উপজেলার শিবরামপুর, পলাশবাড়ী, শতগ্রাম, পাল্টাপুর, সুজালপুর, নিজপাড়া, মোহাম্মদপুর, ভোগনগর, সাতোর, মোহনপুর ও মরিচা ইউনিয়নের প্রত্যান্ত গ্রামঞ্চলে গুটি কয়েক শিমূল গাছে ফুল দেখা গেলেও বর্তমানে কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তা। গাছে গাছে সবুজ পাতা, মুকুল আর ফুল আর কোকিলের ডাক মনে করিয়ে দেয় বসন্তের আগমনী বার্তা। আম কাঁঠালসহ, লিচু লেবু ও বিভিন্ন গাছের পাতা ও মুকুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে আবার এলো ফাগুন, এলো বসন্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি থেকে এখন বিলুপ্তির পথে মূল্যবান শিমুল গাছ। তাই আগের মতো খুব একটা চোখে পড়ে না ফাগুনের রঙে রাঙানো রক্তলাল শিমুল গাছ। গ্রামে শিমুল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত।

গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষ ফোঁড়া, আখের গুড় তৈরিতে শিমুলের রস ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গাছের মূলকে ব্যবহার করতো। কিন্তু নানা কারণে তা হ্রাস পেয়েছে। এখন আর শিমুল গাছ কেউ রোপণ করে না। শিমুল গাছ এমনিতেই জন্মায় তা দিনে দিনে বড় হয়ে একদিন বিশাল আকৃতি ধারণ করে। বসন্তে শিমুল গাছে রক্ত কবরী লাল রঙে ফুটিয়ে তোলে, দৃষ্টি কেড়ে নেয় সবার মন। কিছুদিন পরে রক্তলাল থেকে সাদা ধুসর হয়ে তুলার তেরি হয়। গ্রাম বাংলার এই শিমুল গাছ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিতো। গ্রামের মানুষেরা এই শিমুলের তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করতো। অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোষক, বালিশ। শিমুলের তুলা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে, এমন নজিরও আছে। তবে কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বীরগঞ্জ উপজেলায় আগের মতো তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছের। প্রতিনিয়ত বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ। যার কারণে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, অতি চিরচেনা শিমুল গাছ।

বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার সেন বলেন, বসন্ত মানেই শিমুল ও পলাশ ফুল। এবারের বসন্তে ঘুরে আসতেই বীরগঞ্জ উপজেলায় শিমুল গাছগুলোতে আগুনরাঙা নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি। সহৃদয়ের ব্যাকুলতা নিয়ে এসেছে বসন্ত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক। আগে শিমুল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত ছিলো। বর্তমানে শিমুল গাছ বিলুপ্তের পথে।

দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু হুসাইন বিপু বলেন, শিমুল ফুল না ফুটলে যেনো বসন্ত আসে না। বাংলাদেশের ভৌগলিক পরিবেশের সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চার একটি যোগ সূত্র রয়েছে। গান কবিতা নাটকে বাংলার প্রকৃতি উঠে আসে বারবার। ঠিক সেভাবে বসন্ত এলেই চলে আসে শিমুলের কথা। গাছে গাছে এখন শিমুল ফুল। আমাদের ঋতু বৈচিত্রের এসব অনুসঙ্গকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের।

স্বাআলো/এস

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

বৃষ্টির প্রার্থনায় সালতুল ইস্তিসকার নামাজ আদায়

প্রদীপ রায় জিতু, বীরগঞ্জ, (দিনাজপুর): সূর্যের আলোর প্রখরতা, তীব্র...

দিনাজপুরে বাঁশের চালে’ রান্না হচ্ছে ভাত-পায়েস

জেলা প্রতিনিধি,দিনাজপুর: ধান নয়, বাঁশের ফুলের বীজ থেকে তৈরি...

২০ অসচ্ছল নারীকে সেলাইমেশিন দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ

প্রদীপ রায় জিতু, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: জেলার বীরগঞ্জে ২০...

গাছে গাছে আমের মুকুল, মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা চারদিক

প্রদীপ রায় জিতু, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে...