ফুলের রাজধানী গদখালীতে ছত্রাকের থাবা, ব্যবসায় নামবে ধস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীতে ছত্রাকের থাবায় চাষীদের হিসাব এলোমেলো হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তার বলিরেখা তাদের চোখেমুখে।

এতে ‘ফুলের সিজন’ বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আর শহিদ দিবসকে ঘিরে গোলাপ-ব্যবসায় ধস নামবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আবার ‘ভালোবাসার অনুপম নিদর্শন’ গোলাপ সংকটে ফুলপ্রেমীদের পকেটকাটা যাওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পচনরোগে গোলাপ গাছের ডাল, পাতা ও কুঁড়ি ঝরে পড়ছে। এক দিকে ছত্রাকের আক্রমণে ক্ষেতের গোলাপ নষ্ট হয়ে যাওয়া, আরেক দিকে কম পরিমাণ গোলাপ ফোটায় এবার তিন দিবসের গোলাপ অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত শীত, কুয়াশা ও অসময়ের বৃষ্টি গোলাপ বাগানের এই অবস্থা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলে ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে অন্তত ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হয়, যার মধ্যে ৩০ হেক্টর জমিতে চায়না গোলাপের চাষ হয়।

কৃষকরা বলছেন, কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিংবা তাদের দেয়া পরামর্শে প্রতিকার মিলছে না। তাদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আসেন না।

আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চাষিরা নির্দেশনা না মেনে অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, অতিবৃষ্টি আর কুয়াশার কারণে গোলাপগাছে পচনরোগ ধরেছে। চাষীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা মাঠ পরিদর্শন করেছি। যেসব বাগানের বয়স এক বছরের কম, সেসব বাগান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এই রোগের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

ফুলের রাজধানীর বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এখন ফুলের সমারোহ। এর মধ্যে গোলাপ বাগানে সাদা ক্যাপমোড়ানো গোলাপের কুঁড়ি বাতাসে দুলছে।

কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর গোলাপের উৎপাদন কম হবে। গাছের পাতা, ডাল কিংবা কুঁড়ি পচে ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও মিলছে না সমাধান।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এই অঞ্চলে অন্তত ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হয়। এ বছর তীব্র শীত ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গাছের কাণ্ড, পাতা, ও ফুলের কুঁড়ি পচে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আশানুরূপ গোলাপ উত্পাদন হয়নি।

তিনি বলেন, কমবেশি সবার খেতেই ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত ফুল তোলার জন্য যারা বেশি মাত্রায় সার ও সেচ দিয়েছেন, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অর্ধেন্দু পাঁড়ে বলেন, গোলাপগাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। কৃষকরা কথা শোনেন না। তারা অতিমাত্রায় সার, কীটনাশক ব্যবহার করেন। এতে গাছের পাতায় স্তর তৈরি হয়ে গেছে। ফলে সালোক-সংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছ খাবার তৈরি করতে পারে না। তবে গরমের আবহাওয়া আসার সঙ্গে সঙ্গে পচারোগ ঠিক হয়ে যাবে।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

বেনাপোলসহ ৪ স্থলবন্দরে অনলাইনে যাত্রী সুবিধা চার্জ আদায়

ভারত ভ্রমণে পাসপোর্টধারীদের যাত্রা সহজ ও ভোগান্তি কমাতে অনলাইনে...

এসএসসির ফল প্রকাশ কাল, জানা যাবে যেভাবে

ঢাকা অফিস: এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে...

বাংলাদেশের আসল উন্নয়নের রহস্য শেখ হাসিনা: এমপি নাবিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) মহাবিদ্যালয়ের বার্ষিক...

সোনার দাম আরো বাড়লো

ঢাকা অফিস: দেশের বাজারে সোনার দাম আবারো বেড়েছে। সব...