সম্পাদকীয়: বাগেরহাটে কৃষি জমি অকৃষি জমিতে পরিণত হচ্ছে নতুন নতুন বাড়িঘর গড়ে উঠছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। এর প্রভাব পড়ছে কৃষিজমির ওপর। সেখানে আবাদি জমিতে স্থাপিত হয়েছে অনেক ইটভাটা।
উপকূলীয় এই এলাকায় লবণাক্ততা ও নদী ভাঙনের প্রভাবেও কমছে কৃষিজমি। নানা কারণে মোরেলগঞ্জে প্রতি বছর একশ হেক্টর ফসলিজমি অকৃষিজমিতে পরিণত হচ্ছে। কৃষিজমি কমছে দেশজুড়েই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘কৃষি শুমারি রিপোর্ট ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১.৮৬ কোটি একর। অথচ ২০০৮ সালে ফসলি জমির পরিমাণ ছিলো ১.৯ কোটি একর, অর্থাৎ ২০০৮ থেকে ২০১১ এই ১১ বছরে দেশে নিট আবাদি জমি কমেছে প্রায় চার লাখ একর।
একাধিক কারণে দেশের কৃষিজমি কমছে। জমি বাড়ছে না কিন্তু এর প্রয়োজন বাড়ছে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের চাহিদা বেড়েছে। এর প্রভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। শিল্প কলকারখানা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কমছে কৃষিজমি। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের (এসআরডিআই) এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের পর থেকে প্রতি বছর ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বছরে কৃষিজমি কমছে তিন হাজার হেক্টর ।
দেশের অর্থনীতি এখনো অনেকাংশে কৃষিনির্ভর। করোনা মহামারীতে কৃষির গুরুত্ব আবার বোঝা গেছে। দিন দিন কৃষিজমি কমার খবরটি ভালো নয়। জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। কাজেই কৃষিজমির ওপর চাপ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু কৃষিজমির পরিমাণ কমতে থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। কেবল উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে ভবিষ্যতের চাহিদা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে কিনা সেটা ভাবার অবকাশ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হলে কৃষিজমি আশঙ্কাজনক হারে কমতো না। নগরায়ণ, আবাসন, শিল্পকলকারখানা গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিতভাবে। কোনো অবস্থাতেই তিন ফসলি কৃষিজমিকে ধ্বংস করা যাবে না। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েরও নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা সংশ্লিষ্টদের মানতে হবে। যে কোনো মূল্যে কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি ২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন ২০১০ অনুসারে কৃষিজমি কৃষিকাজ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এই নীতির বাস্তবায়ন জরুরী।
স্বাআলো/এসআর