যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রফতানি হয়েছে ৬০০ মেট্রিক টন ৪৪০ কেজি ইলিশ। ইলিশ সংকট, বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অক্টোবর মাস ইলিশ প্রজননের মৌসুম হওয়ায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষেধাজ্ঞা জারিতে ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিক্রি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে
ইলিশের এ সংকট কিন্তু নতুন নয়। গ্রাম্য মাদরাসার শিক্ষক আনোয়ারুজ্জান ২০ বছর আগে ইলিশ মাছের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা ভেবেছিলেন, আজ তাই হতে যাচ্ছে। ইলিশ মনে হয় বাঙালির স্মৃতি থেকে হারিয়েই যাবে। ইলিশ আহরণের যে চিত্র তাতে বাঙালি এই মাছটির স্বাদ অচিরেই ভুলে যাবে বলে সন্দেহটা ঘনীভূত হচ্ছে। এ বছরের ইলিশ আহরণের চিত্র হতাশাব্যঞ্জক। গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম ইলিশ ধরা পড়ছে।
ইলিশ নিয়ে হতাশা কিন্তু আরো আনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। ২০ বছর আগে ২০০২ সালের আগস্ট মাসে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীরামপুর আলিম মাদরাসার শিক্ষক আনোয়ারুজ্জামান ইলিশ নিয়ে এক ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তিনি কষ্টে-সৃষ্টে একটা ইলিশ মাছ কিনে তার শিশু ছেলে নাজিব বিন আনোয়ারসহ যান স্টুডিওতে। সেখানে ছেলের হাতে মাছটি দিয়ে একটি ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখেন।
আনোয়ারুজ্জামানের ভাবনাটা এমন যে, ভবিষ্যতে বাঙালির কাছে ইলিশ কিংবদন্তী হয়ে উঠবে। সে সময় ছেলেকে ছবি দেখিয়ে ইলিশের স্মৃতিচারণ করবেন। বাঁধানো ছবিটি এখনো তার ঘরে আছে। দূরদর্শী আনোয়ারুজ্জামানের ভবনাটাই আজ খেটে যাচ্ছে।
ইলিশ কম আহরণের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন তা হলো, যথাসময়ে বৃষ্টি কম হওয়া এবং নদ-নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এ কারণে সাগর ছেড়ে নদীতে ইলিশের প্রবেশ কম হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
বাঙালির ঐতিহ্য ইলিশ যদি হারিয়ে যায় এ ক্ষেত্রে আবহাওয়া তথা জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া এটি। এ নিয়ে দাপিয়ে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। অনেকে বলছেন, নিয়মিত খনন প্রক্রীয়া অব্যাহত রাখলে নদ-নদীর নাব্য ঠিক থাকবে। তাদের এ কথা সব ক্ষেত্রে সঠিকও ভাবা যাবে না। কারণ বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ানোর কোনো কৌশল তো আর মানুষের হাতে নেই। প্রকৃতি অনিবার্য কারণে তার রূপ বদলায়। এটা তার ধীর প্রক্রীয়া। পৃথিবী শুরুতে যে রূপ নিয়ে এখন তা নেই। পরিবর্তনকে মেনে নিয়েই আমাদেরকে এগোতে হবে।