দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই প্রশাসনে আরেক দফা রদবদল ও উপ-সচিব পদে পদোন্নতি আসছে। অন্তত ১০ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হবে। এসব পদে নতুন মুখ দেখা যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি মাসে ও নভেম্বরে তিন মন্ত্রণালয়ে সচিবের পদ শূন্য হচ্ছে। এসব পদে নতুন মুখ আসবে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে সচিব পদে রদবদল করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্বাস্থ্য সচিবের অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় এ রদবদল হচ্ছে।
তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে, না হলে নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি পদে নড়চড় হবে।
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৩ অক্টোবর। তার জন্মদিন ১৪ অক্টোবর। ওই দিন তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। এ হিসাবে শেষ কর্মদিবস হবে ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন। সূত্র জানায়, মাহবুব হোসেনকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত প্রায়। যদি কোনো কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া না হয়, সে ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী হবেন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের ৮৬ ব্যাচের এ কর্মকর্তা ৩ জানুয়ারি দায়িত্ব নেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ অক্টোবর। শোনা যাচ্ছে, কর্মরত সচিবদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সচিব নিয়োগ দেয়া হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাহাঙ্গীর আলম অথবা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেনকে এ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এখনো পর্যন্ত সমাজকল্যাণ সচিব জাহাঙ্গীর আলমের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে এ পদের জন্য।
প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতি পান গত বছরের ১৮ মে। প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)-১ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন ভালো কর্মকর্তা হিসেবে সুপরিচিত। অবশ্য তার চাকরির মেয়াদ শেষ হতে এখনো প্রায় চার বছর বাকি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহরও দফতর বদল হতে পারে।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কমপক্ষে ১০ জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হতে পারে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, নোয়াখালী জেলার দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, চাঁদপুর জেলার কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম জেলার আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানসহ ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নির্বাচনের আগে প্রত্যাহার করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
জানা গেছে, প্রশাসনে শিগগির উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হবে। এবার পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন প্রশাসন ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) গতকাল সোমবার এ নিয়ে বৈঠক করেছে। পদোন্নতির জন্য লেফটআউট তালিকার বাইরে নিয়মিত ব্যাচ থেকে বিবেচনায় ১৯৫ জনকে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইকোনমিক ক্যাডার থেকে প্রশাসনে একীভূত হওয়া কর্মকর্তা রয়েছেন ২৯ জন।
এদিকে সম্প্রতি সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা আব্দুর সবুর মণ্ডলকে শিগগির কোনো একটি মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। একই সময়ে নিয়োগও দেয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যিনি নিয়োগ পাবেন, তার খালি হওয়া মন্ত্রণালয়ে সবুর মণ্ডলের নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এখনো পর্যন্ত পূর্বের পদে সংযুক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও নিম্ন পদে তার এই দায়িত্ব পালনকে প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে এপিডির (অতিরিক্ত সচিব) পদে কে আসছেন, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।
এ পদে এখনো পর্যন্ত ১৫তম ব্যাচের কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন- রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ডা. সারোয়ার বারী, মালয়েশিয়ায় বিদেশ মিশনে কর্মরত নাজমুস সাদত সেলিম, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মহিদুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক সারোয়ার আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, বিমানের এমডি শফিউল আজিম এবং এপিডি উইংয়ে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা।
এপিডি নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে কখনো এক ব্যাচ ডিঙিয়ে পদায়ন করা হয়নি। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এপিডি হিসেবে রয়েছেন ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ধারাবাহিকতা রক্ষায় এক ব্যাচ জুনিয়র ১৫তম ব্যাচ থেকেই নতুন এপিডি নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
স্বাআলো/এস