রোজা রেখে রক্ত দেয়া যাবে কি?

রক্ত দান নিঃসন্দেহে ভালো কাজ। কারণ, আপনার দেয়া রক্তে বেঁচে যেতে পারে কারো প্রাণ। রোজা রেখে রক্ত দান করার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নিষেধ নেই।

অনেকেই এ সময়ে রক্ত দেয়া নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। তবে রোজা থাকা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত দিলে রোজা ভাঙে না। কারণ, এখানে রক্ত বের করে নেয়া হচ্ছে, দেয়া নয়।

রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না। তবে কেউ যদি শারীরিকভাবে এমন দুর্বল হয় যে, রক্ত দিলে সে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবে, তাহলে তার জন্য রক্ত দেয়া মাকরুহ। আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৪৩৫

গাজায় রমজান: যুদ্ধ, দুঃখ ও কষ্টের প্রতিধ্বনি

হজরত আকরামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম (সা.) হজের জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন এবং রোজা অবস্থায়ও শরীর থেকে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করেছেন।

তাছাড়া রক্তদান একজন রোগীর সেবার অন্তর্ভুক্ত। কারণ পবিত্র কোরানে আছে, যে ব্যক্তি কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেনো পুরো মানবজাতিকে রক্ষা করলো।

তবে রোজা রেখে রক্তদান করলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে রক্ত দেয়ার পর রক্তদাতা শারীরিক সমস্যায় না পরেন।

রোজার নিয়ত কখন, কীভাবে করবেন?

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত অনুযায়ী একজন সু-সবল ব্যক্তির শরীরে প্রায় ১ থেকে দেড় লিটার বাড়তি রক্ত থাকে, তাই যেকোনো জরুরি অবস্থায় রক্তদান করলেও শরীরে ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়ে না। অবশ্য এই পরিমাণের চেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হলে অন্য কথা। রক্তদান-পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তিন-চার লিটার পানি বেশি খেলে, রক্তদানজনিত ভলিউম–স্বল্পতা কেটে যায়। তবে কেউ যদি শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে, মনে করেন যে তিনি রক্ত দিলে রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলবেন, তাহলে তার জন্য ইফতারের পর রক্ত দেয়া বাঞ্ছনীয়।

আমরা জানি, স্বাভাবিক প্রবেশপথ দিয়ে পেটে বা মস্তিষ্কে কোনো কিছু গেলে রোজা ভেঙে যায়। কিন্তু শরীর থেকে কোনো কিছু বের হলে রোজা ভাঙে না। তাই দুর্ঘটনায় পড়ে, হাত-পা ভেঙে বা কেটে রক্ত বের হলে রোজা ভাঙবে না। রক্ত গড়িয়ে পড়লে অজু ভঙ্গ হয়, রোজা নয়। রক্তদানের পর রক্তদান কেন্দ্রে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে রক্তের ভলিউম ঠিক হয়ে যায়। এই বিশ্রামে শরীর ঝিমঝিম করা, মাথা হালকা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ফরজ গোসল না করে সেহরি খেলে কি রোজা হবে?

রোজার দিনগুলোয় রক্তদানের পর ২-৪ ঘণ্টা ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন শারীরিক পরিশ্রম, সাইকেল চালানো, অধিক উচ্চতায় কাজ করা ইত্যাদি। রক্তদান পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা তরলজাতীয় উপাদান যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, খাওয়ার স্যালাইন, নরমাল পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ লিটার বেশি খেতে হবে।

মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ একজন ব্যক্তি রক্তদানের জন্য উপযুক্ত। রক্তদানের আগের রাতে ৬-৮ ঘণ্টার ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারপরও কোনো রকম অসুবিধা হলে রক্তদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অতএব রক্তদানে রোজা ভেঙে যাওয়ার কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে মানবসেবার তরে রমজান মাসে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকা উচিত। এতে করে রোজার সওয়াবের পাশাপাশি মানবসেবার সওয়াবও পাওয়া যাবে।

স্বাআলো/এস

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

হোয়াটসঅ্যাপে ইন্টারনেট ছাড়াই পাঠানো যাবে ছবি, ভিডিও ও ডকুমেন্ট

বিশ্বজুড়ে বর্তমানে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে মেটার হোয়াটসঅ্যাপ। এই অ্যাপের...

এই গরমে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

দেশের অনেক জায়গায় বইছে তাপপ্রবাহ। হিট অ্যালার্ট জারি করেছে...

ঈদের দিন ঘুরতে বের হলে করণীয়

ঈদের দিন শুধু নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই আনন্দ ভাগাভাগি...

শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া

রমজান মাসের ২১ থেকে ২৯ তারিখের মধ্যে বিজোড় সংখ্যার...