spot_img

বিএনপি সংসদ নির্বাচনে আসছে?

শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে দলটি এখন চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে রয়েছে। দাবি আদায় করেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তারা। তারপরও দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন রয়েছে। বিশেষ করে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে গতবার শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, সম্প্রতি বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়কে গুরুত্ব না দিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে যেতে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনের পরামর্শ, বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসবে, এমনটি ধরে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ, নির্বাচনে না গেলে দলে ভাঙনের শঙ্কা, চলমান আন্দোলন সফলে দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নিজ আসনে গিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হাইকমান্ডের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলেছে। বিএনপির চলমান আন্দোলন সফল না হলে নির্বাচন ইস্যুতে তখন দলটির অবস্থান কী হবে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সেই প্রশ্নও জোরালোভাবে সামনে চলে আসছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হওয়া এবং পশ্চিমা বিশ্ব গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাওয়ায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না বিএনপির। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা গ্রহণ করে, তা অবলোকন ও পর্যালোচনা করে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি।

দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা প্রতিহত করতে আন্দোলনে নামে বিএনপি ও তৎকালীন ১৮ দলীয় জোটের শরিকরা। নির্বাচনের আগে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে নামেন তারা; কিন্তু ভোট ঠেকাতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো। ওই নির্বাচনে মোট ১৭টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। ভোট নেয়া হয় ১৪৭টি আসনে। আওয়ামী লীগ মোট ২৩৪টি আসন পায়। জাতীয় পার্টি পায় ৩৪টি আসন। আর ১৪ আসনে জয়লাভ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ১৪ জোটের শরিকদের নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সংসদ নেতা নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের নেতা হন রওশন এরশাদ।

নির্বাচনের পর থেকেই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থেকে আন্দোলন অব্যাহত রাখে বিএনপি। দাবি না মানলে নির্বাচনের আগে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়। শুধু নির্দলীয় সরকার নয়, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেও ভোটে না যেতে দলের অবস্থানের কথা জানানো হয়; কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তে দলীয় অবস্থান পরিবর্তন করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে ভোটে যায় দলটি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে তখন দাবি করা হয়েছিলো, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ওই জোটের ব্যানারেই ভোটে গিয়েছিলো বিএনপি। ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে গণভবনে সংলাপেও অংশগ্রহণ করেছিলো। নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি ঘটে। মাত্র ছয়জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এমন প্রেক্ষাপটে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি, যেখানে প্রায় অর্ধশত দল সম্পৃক্ত হয়। আর গত ১২ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে দলটি। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর দাবি আদায়ে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে নামে বিএনপি ও শরিকরা। তবে ওইদিন ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যত আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয় বিএনপি। এমন অবস্থার মধ্যে গত দুই সপ্তাহে তিন দফায় ১৬৮ ঘণ্টার অবরোধ এবং ২৮ ঘণ্টা হরতাল পালন করেছে দলটি।

হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি যতটুকু পালিত হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট বিএনপির হাইকমান্ড। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে, এভাবে আরো কিছুদিন আন্দোলন চালিয়ে গেলে পরিস্থিতির একটা আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হবে। এমন পরিস্থিতিতে তৃণমূলে আন্দোলন চাঙ্গা করতে দলের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের নিজ এলাকায় গিয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। তবে ওই নির্দেশনার মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক বার্তাও রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

এ ছাড়া গত বুধবার বনানীতে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির হাইকমান্ডকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আর বিএনপি সেই নির্বাচনে গেলে সেখানে অংশগ্রহণেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিএনপির নেতা মেজর হাফিজের নেতৃত্বে নতুন দল হচ্ছে বলে সস্প্রতি বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি থেকে নেতারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। সম্প্রতি বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তাদের দাবি, বিএনপির আরও অনেকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচন করবেন। এ ছাড়া সম্প্রতি নিবন্ধন পাওয়া বিএনএম থেকেও বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচন করবেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন আছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে দলে ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এমনটি ধরে নিয়েই নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। বিএনপির হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ এনে একই কারণে দলটি আগামী নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবে বলে নেতাদের জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে একই সঙ্গে বিএনপির নির্বাচন বানচাল করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, তফশিল ঘোষণার পরপরই তারা সারাদেশে নাশকতা শুরু করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপির চলমান আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফলতা না পেলে তাদের সামনে দুইটি বিকল্প থাকবে। এক. দশম সংসদের মতো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনও বর্জনের পথে হাঁটা এবং দুই. সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাওয়া।

তবে বিএনপিদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাবে না বলে ইতোমধ্যে দলের বিভিন্নস্তরের নেতা এবং যুগপতের শরিকদের জানিয়ে দিয়েছে। যুগপতের শরিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তাদের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনে গেলে তারা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হবেন বলেও সতর্ক করেছে বিএনপি। শরিকরাও বিএনপিকে ছেড়ে নির্বাচনে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য
Related

কোটা আন্দোলন ঘিরে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে: কাদের

ঢাকা অফিস: শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘটিত প্রতিটি...

২৭ ইউনিটের কমিটি ভেঙে দিলো আ.লীগ

ঢাকা অফিস: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার বিরুদ্ধে মাঠে...

যারা টাকায় পদ কিনে, তারা মাঠে নামবে কেন: কাদের

ঢাকা অফিস: আওয়ামী লীগে পদ-বাণিজ্য বন্ধের জোর দাবি উঠেছে।...

নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া করবে আ.লীগ

ঢাকা অফিস: কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় নিহত ও আহতদের...