এনজিও’র ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে মায়ের সঙ্গে থানায় সারারাত শিশু!

নন গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। তার ঋণের জিম্মাদার হয়েছিলেন বোন সুমি আক্তার (২৬)। এনজিওর কিস্তি ঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারেননি দেলোয়ার। সেই অপরাধে সুমির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয় এনজিও কর্তৃপক্ষ। ওয়ারেন্ট আসে তার বিরুদ্ধে।

পুলিশ আসে বাড়িতে। এমন সময় বাড়িতে ছিলেন না সুমি। তাই পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় তার অসুস্থ স্বামীকে।

খবর পেয়ে ৪ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে থানায় ছুটে যান সুমি। সেখানে তাকে আটকে রাখা হয় হাজতে। এ সময় সুমির সঙ্গে ছিল অবুঝ সন্তান। এমন ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লার মুরাদনগরে।

শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সন্তানসহ সারারাত সুমিকে থানায় আটকে রাখে পুলিশ। সন্তানকে কোলে নিয়ে থানাহাজতে থাকা অবস্থায় সুমির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিন্দা জানায় সবাই।

জানা যায়, মুরাদনগর উপজেলা সদরের উত্তর পাড়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের স্ত্রী সুমি আক্তার। শুক্রবার বিকেলে মুরাদনগর থানার এসআই আলমগীর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সুমিকে না পেয়ে মোতালেবকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রাখেন।

বিষয়টি জানতে পেরে সুমি কোলের শিশুকে নিয়ে থানায় হাজির হলে ছেড়ে দেয়া হয় তার স্বামীকে।

আব্দুল মোতালেব অভিযোগ করে বলেন, যদি কোনো ধরনের অপরাধ করে থাকে সেটি আমার স্ত্রী করেছে। তার অপরাধে তো আর আমাকে অসুস্থ অবস্থায় ৪ ঘণ্টা হাজতে আটকে রাখতে পারে না। আমার শিশু মেয়ে কী অপরাধ করেছে, তাকেও সারারাত হাজতের ভেতরে আটকে রাখতে হলো? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী সৈয়দ তানবির আহমেদ ফয়সাল বলেন, একজনের অপরাধে অন্যজনকে সাজা দিতে পারে না পুলিশ। শিশুদের জন্য আলাদা সেল থাকে, যদি পুলিশ হাজতে শিশুটিকে রাখে তাহলে এটা ঠিক করেনি।

মুরাদনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর বলেন, ওয়ারেন্ট তামিলের জন্য সুমি আক্তারের বাড়িতে গেলে সে পালিয়ে যান। এ সময় তার স্বামীকে দেখে নেশাগ্রস্ত মনে হওয়ায় ওসিকে জানালে তিনি তাকে থানায় নিয়ে আসতে বলেন। পরে তার স্ত্রী থানায় আসলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে হাজতে রাখা হয়নি, একটি রুমে রাখা হয়েছিলো।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী ইবনে জলিল বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সুমি আক্তার ও তার শিশুসন্তানকে থানাহাজতের ভেতরে রাখার বিষয়টি মিথ্যা। কারণ আমার থানায় কোনো নারী সেল নেই। তাকে থানার নারী ও শিশু ডেস্কে রাখা হয়েছে।

অপরদিকে স্বামীকে তুলে এনে ৪ ঘণ্টা আটকে রাখার বিষয়টিও মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনাই মুরাদনগর থানায় ঘটেনি।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নেবো। যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

বজ্রপাতে প্রাণ গেলো ৬ জনের

চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার...

ইউপি সদস্যের কাছে চাঁদা দাবি, পুলিশ এসআই বরখাস্ত

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা: জেলার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন...

প্রেম-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে যুবক খুন, দুইজনের মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা: হোমনায় প্রেম-সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ফয়সাল...

স্বামীকে হত্যা, স্ত্রীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা: জেলার হোমনায় প্রবাসী আব্দুল জলিল হত্যা...