আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৪, শঙ্কায় দগ্ধদের পরিবার

ঢাকা অফিস: গাজীপুরের গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে আগুনের ঘটনায় ইয়াসিন আরাফাত (২১) ও মসিউর আলী (২২) নামের আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ জনে।

গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাত ৮টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর শরীরের ৬২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিলো।

বার্ন ইনিস্টিউটের সহযোগী অধ্যাপক হোসাইন ইমাম এ তথ্য দিয়েছেন।

গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো এ হাসপাতালে ভর্তি দগ্ধ ১৬ জনের পরিবার ছয়দিন ধরে অপেক্ষায় আছেন। ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তারাও আতঙ্কে আছে। ঘটনার দিন থেকে তারা ইনস্টিটিউটের আইসিইউয়ের সামনে বসে থাকে।

গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন, প্রাণ হারালো আরো ১ জন

তাদের কারো সন্তান, কারো স্বামী আবার কারো স্বজন রয়েছে সেখানে। অপেক্ষমাণ স্বজনদের কেউ কেউ বলেন, কখন কী হয় বুঝতে পারছি না।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে গতকাল দুপুরে কাঁদছিলেন ইকরামুল। তিনি গাজীপুরের আগুনের ঘটনায় দগ্ধ মুন্নার (১৮) বড় ভাই। মুন্নার শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

কাঁদতে কাঁদতে ইকরামুল বলেন, ‘আমার ভাই মুন্নাকে নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি। তাকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই। চোখের সামনেই এতজন মারা গেল। এত মৃত্যু দেখে মনকে বুঝ দিতে পারছি না।

ইকরামুল আরো বলেন, ‘ছয়দিন ধরে ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। নাওয়া-খাওয়া, ঘুমানোর ঠিক নাই। রোজা রাখতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি। আমার কাছে এখন খাওয়ার টাকাও নাই। রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। আপাতত বেকার। ভাইয়ের জন্য হাসপাতালে থাকছি। বাকি দিনগুলো কিভাবে চলবে বুঝতে পারছি না।’

আবারো বাড়লো এলপি গ্যাসের দাম

মুন্নাও রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ঘটনার দিন আগুন নেভাতে গিয়েই দগ্ধ হন তিনি। শুধু মুন্না নয়, বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন কারোরই অবস্থা ভালো নয়।

গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে লাগা সেই আগুনের ঘটনায় দগ্ধ ১৭ জন এখনো শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শঙ্কর পাল। তিনি বলেন, গ্যাসের আগুনে দগ্ধদের মধ্যে ১৩ জন এরই মধ্যে মারা গেছেন। ভর্তি থাকা ১৫ জনের কেউ-ই সংকটমুক্ত নয়। তাঁদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চলছে।

গত ১৩ মার্চ ইফতারের আগে কোনাবাড়ী এলাকার টিনশেড কলোনিতে আগুন লাগে। এতে নারী-শিশুসহ কমবেশি ৩৬ জন দগ্ধ হন তাঁদের মধ্যে ৩২ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এরপর একে একে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কেউ ছিলেন পোশাক কারখানার শ্রমিক, কেউ ভাঙ্গারি সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ করতেন, কেউ ছিলেন রাজমিস্ত্রি বা শ্রমিক। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তাঁদের চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ রাখছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাআলো/এসআর

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

দুইদিনে সোনার দাম বাড়লো ১৭৮৫ টাকা

ঢাকা অফিস: টানা আট দফায় কমানোর পর দেশের বাজারে...

খুলনাসহ ৮ বিভাগে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি

ঢাকা অফিস: খুলনাসহ দেশের ৮ বিভাগের ওপর দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে...

বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন বিজিপির আরো ৮৮ সদস্য

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার: জেলার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে নতুন করে...

সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে রিট

ঢাকা অফিস: পরিবেশ রক্ষায় রাজধানী সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধের...