৩ মাসে ডেঙ্গুজ্বরে ১০৯৭ জনের প্রাণহানি

আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এই তিনমাসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে ১০৯৭ জনের।

ডেঙ্গুর প্রকোপে এই তিন মাসে ডেঙ্গুকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ছিলো দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই তিন মাসে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৪৩ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এর আগে একটানা তিন মাসে এতো বেশি মানুষের আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩৫৯ জন। এ মাসে ডেঙ্গুতে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে ২০৯ জন নারী, পুরুষ ১৫০ জন। সে হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃতদের ৫৮ শতাংশই ছিলো নারী।

ডেঙ্গুতে নারীদের মৃত্যু বেশি হলেও আক্রান্তদের মধ্যে আবার এগিয়ে ছিলেন পুরুষরা। এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৩৯ হাজার ৪৩৮ জন, নারী ২৮ হাজার ৩৮১ জন। সে হিসাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ ছিলেন পুরুষ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৭১ হাজার ৯৭৬ জন। সেপ্টেম্বরে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় সেই সংখ্যাকেও। এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন। অক্টোবরে অবশ্য ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭ হাজার ৭৬৯ জনে। সে হিসাবে এই তিন মাসেই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো দুই লাখ ১৯ হাজার ৩৪৩ জন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যায়ও আগস্টকে পেরিয়েছে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, আগস্টে ডেঙ্গু মৃত্যু হয়েছিলো ৩৪২ জনের। সেখানে সেপ্টেম্বরে ৩০ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা যান ৩৯৬ জন। এরপর অক্টোবরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩৫৯ জনের। অথচ এর আগে ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট মৃত্যু হয়েছিলো ৮৫৩ জনের।

অক্টোবরে বৃষ্টি খুব একটা হবে না ধরে নিয়েই এ মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসবে বলে ধারণা করছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অক্টোবরেও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত কম হয়নি। এ কারণে এডিস মশার প্রজননও কমানো যায়নি বলেই নিয়ন্ত্রণহীন ছিলো ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। নভেম্বরের শুষ্ক আবহাওয়ার দিকেই এখন ভরসা করে তাকিয়ে আছেন তারা।

ভাইরোলজিস্ট ও রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্বেই হঠাৎ হঠাৎ তাপপ্রবাহ বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে অতিবৃষ্টিও। নির্ধারিত মৌসুমের বাইরে তাই বৃষ্টিও বেড়েছে। ফলে এখন সারাবছরই ডেঙ্গু থাকবে। তবে বৃষ্টির মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি থাকবে।

জাহিদুর রহমান আরো বলেন, গত বছরেও (২০২২ সালে) অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিলো সবচেয়ে বেশি। এবছরও অক্টোবরে ৩৫৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন নভেম্বরে সেভাবে বৃষ্টি না হলে এবং মশা নিধন কর্মসূচি কার্যকরভাবে চালিয়ে যেতে পারলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটবে।

সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু যে দেশে ঢোকে, সেখান থেকে বের হয় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের দেশে দুই যুগের বেশি সময় ধরে এর নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কিছুই করা হয়নি। এখনো যদি আমরা ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই, সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে সেই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু কোনো কমিউনিটিতে প্রবেশ করলে তাকে একেবারে নির্মূল করা যায় না। ভবিষ্যতে আরো নগরায়ন হবে, আরো উন্নয়ন হবে। সবখানেই মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার দিতে মনোযোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

১০ টাকার টিকিটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: সাধারণ রোগীদের মতো ১০ টাকার টিকিট কেটে রাজধানীর...

টানা ৮ দফায় সোনার দাম কত কমলো

ঢাকা অফিস: দেশের বাজারে টানা আট দফায় সোনার দাম...

বিদ্যুতের দাম বছরে ৪ বার বাড়বে

ঢাকা অফিস: ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম...

জনগণ এখন মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে চলতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আব্দুল হাইয়ের মতো...