রোজাদারের করণীয় ও বর্জনীয়

ঢাকা অফিস: রমজান মাসে যে রহমত নাজিল হয় তার তুলনায় অন্যান্য মাসের নাজিলকৃত রহমত, সমুদ্রের তুলনায় এক ফোঁটা পানির মতো। এ কারণে সব আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। এই মাসে কোনো নফল করলে সেটা ফরজের সমান সওয়াব, আর কোনো ফরজ করলে সেটিরও ৭০ গুণ সওয়াব।

হাদিস শরিফে এসেছে, রসুলুল্লাহ দোয়া করতেন, হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন। এ মাসটি কতো বরকতময় যে তা পাবার জন্য আল্লাহর রসুল পর্যন্ত দোয়া করতেন। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন মাজিদে বলেন–

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেনো তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার (সুরাহ বাকারাহ: ১৮৩)।

এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, রোজা এই কারণে ফরজ করা হয়েছে যাতে আমরা পরহেজগার, মুত্তাকি হতে পারি। আর পরহেজগার হবার জন্য প্রথম গোনাহ পরিত্যাগ করতে হবে, তারপর নেকি বেশি বেশি করে করতে হবে।

গোনাহ বর্জন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, অনেকে রোজার দ্বারা ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত ছাড়া অন্য কিছুই লাভ করে না। অন্য এক হাদিস শরিফে বলেন, যে গর্হিত কথাবার্তা এবং পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে পারে না, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার তার খাবার এবং পানীয় ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, তার রোজা গ্রহণীয় নয়।

সবরকম গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এর মধ্যে আর একটি ভয়াবহ গোনাহ হলো গীবত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের যুগে দুই মহিলা রোজা রাখলো। রোজায় তাদের এতো কষ্ট হলো যে, তারা মৃত্যুর মুখোমুখি হলো। রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিষয়টি জানানো হলে তিনি তাদের কুলি করতে বললেন। তারা কুলি করলে তাদের মুখ থেকে ছোটো গোস্তের টুকরা বের হলো। তারা আশ্চর্য হয়ে বললো, আমরা তো কোনো পানাহারই করিনি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, মূলত তোমরা রোজা রেখে অন্যের গীবত করেছ। আর গীবত হলো মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া।

অন্যান্য গোনাহ: আসুন এই রোজায় সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করে ফেলি। মনে করি এটাই আমাদের শেষ রোজা। যারা মোবাইলে গান শোনেন তারা অন্তত এই মাসটা গান বন্ধ রাখুন, এর পরিবর্তে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, কাসিদা শুনুন।

আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, কেউ কি কখনো বলে এটা ছোট আগুন ওটা বড় আগুন। ছোট হোক, বড় হোক পুড়িয়ে ধংস করার জন্য এক শলতে আগুনই যথেষ্ট। তেমনি গোনাহ ছোট হোক বা বড় হোক সব ক্ষতিকর।

নেককারদের আমল: রমজান মাসে বিশেষ কিছু সুন্নত রয়েছে, যথা- ২০ রাকাত তারাবিহ সালাত আদায় করা, সেহরি খাওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা, ইফতার করা ও করানো, কোরআন করিম বেশি বেশি তিলাওয়াত করা এবং শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা।

রমজানে প্রতিটি ইবাদতের বিনিময় ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। একটি নফল পালন করলে একটি ফরজ পালন করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই রমজান মাসে নফল ইবাদত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রমজান মাসের বিশেষ নফল আমলসমূহ হলো- কোরআন মাজিদ একাধিকবার খতম বা পূর্ণ পাঠ করা, কালিমা তৈয়্যবা বেশি বেশি পাঠ করা, দরুদ শরিফ বেশি বেশি পাঠ করা, তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকা, সর্বদা তসবি তাহলীল ও জিকির করতে থাকা, দীনী শিক্ষা ও দীনী দাওয়াতি কাজে মশগুল থাকা, ধর্মীয় বই-পুস্তক, তাফসির, হাদিস, ফিকাহ ও ইসলামি সাহিত্য পড়া ও অন্যকে পড়তে সাহায্য করা, দীনী মজলিশ ও মাহফিল আয়োজন করা, অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়া এবং তাদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করা, বেশি বেশি দান খয়রাত করা, ইহসান তথা সদা আল্লাহর অস্তিত্বের উপস্থিতির ধ্যান করা ও আল্লাহর সঙ্গ বাস্তবে অনুভব করা অথবা আল্লাহর সার্বক্ষণিক নজরদারির চেতনা মনে জাগ্রত রাখা। (বুখারি: ৪৮)।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

বাগেরহাটে পরিবহনের ধাক্কায় প্রান গেলো ইজিবাইক যাত্রীর

আজাদুল হক, বাগেরহাট: জেলার পিরোজপুর সড়কের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড...

যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা অফিস: থাইল্যান্ড সফরে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার...

দুপুরে দেশে আসছে নিহত ৮ বাংলাদেশির লাশ

ঢাকা অফিস: ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে তিউনিসিয়া...

থাইল্যান্ড সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার (২ মে)...