গত ছয় দিনে ফিলিস্তিনে অন্তত ছয় হাজার বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ৫৩৭ ফিলিস্তিনি। এমন এক বিভীষিকাময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজার ২২ লাখ মানুষের জীবন। নেই চিকিৎসার সুযোগ, এমনকি মৃত স্বজনকে সমাহিত করার জায়গাও এখন পাওয়া যাচ্ছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ৪৪৭ শিশু ও ২৪৮ নারী ছাড়াও ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। এছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীরে মৃতের সংখ্যা ৩১ এ পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। সবমিলিয়ে গত ছয় দিনে অন্তত ছয় হাজার ৬১২ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নাগরিক আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের দাবি, গত ৭ অক্টোবর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা ইসরায়েলে চার হাজার টন ওজনের অন্তত ৬ হাজার বোমা হামলা চালিয়েছে।
এই হামলায় মৃতের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে কবরস্থানগুলোতে আর কবর দেয়ার জায়গা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার গাজার খান ইউনিস এলাকার একটি কবরস্থানে একটি নোটিশে লেখা ছিলো, এখানে কবর দেয়া নিষেধ। কারণ, সেখানে নতুন কবর দেয়ার মতো আর জায়গা নেই। প্রায় একই চিত্র গাজার বেশির ভাগ কবরস্থানের। শুধু কবরস্থানে জায়গার সংকটই নয়, হামলার কারণে সেখানে পৌঁছানোও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
খান ইউনিসে দাফনের কাজে হাত লাগানো স্বেচ্ছাসেবক আদেল হামাদা বলেন, নির্ধারিত স্থানে নিহতের দাফনের জন্য অপেক্ষার সুযোগ নেই। বাড়ির আশপাশেই খোলা জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাফন করতে হচ্ছে।
কবরস্থানের মতো হাসপাতালের মর্গগুলোতেও স্থান সংকট দেখা দিয়েছে। বোমা হামলার ধ্বংসস্তূপ থেকে মর্গে আসছে সারি সারি লাশ। বৃহস্পতিবার খান ইউনিসের একটি মর্গে দেখা যায় নিহতদের স্বজনদের ভিড়। এক পরিবারের নিহত আটজনের মরদেহ নিতে এসেছিলেন পরিচিতজনেরা। আগের দিন পরিবারটির বাড়িতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০টি মরদেহ রয়েছে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ের এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত চার লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সংস্থাটির মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় (ইউএনওসিএ) জানিয়েছে, গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃহস্পতিবার আরো ৮৪ হাজার ৪৪৪ জন বেড়েছে। ফলে বর্তমানে এই সংখ্যা চার লাখ ২৩ হাজার ৩৭৮ এ পৌঁছেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। এর জবাবে গাজার শাসক গোষ্ঠীটিকে ‘মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার’ প্রতিজ্ঞা করে পাল্টা অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যেই গাজার বিদ্যুৎ, পানি, খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর ফলে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে উপত্যকাটিতে।
ইসরায়েল-হামাসের চলমান যুদ্ধে গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোতে সংকট বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় উদ্বাস্তুদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার সহায়তা চেয়েছে ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত জাতিসংঘভিত্তিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইনি রেফিউজি ইন দ্য নেয়ার ইস্ট (ইউএনআরডব্লিউএ)।
অবিলম্বে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বুধবার বলেছেন, গাজায় অবশ্যই খাবার, পানি, জ্বালানিসহ জরুরি জীবনরক্ষাকারী পণ্য যেতে দিতে হবে। আমাদের এখন দ্রুত ও নির্বিঘ্ন মানবিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ পেতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, আল-জাজিরা।
স্বাআলো/এসএস