খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল। ৫০০ বেডের হাসপাতালটিতে সার্বক্ষণিক ১ হাজার ৭ শতাধিকেরও বেশি রোগী থাকে। ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইটিটি’র মতো হৃদরোগের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় খুমেকে। বিভাগীয় শহরের প্রধান হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
জানা গেছে, শুধুমাত্র ইসিজি নির্ভর এই হাসপাতালের হৃদরোগ সেবা। অথচ ৫ বছর আগে এখানে আধুনিক সিসিইউ, ইকো, ইটিটি সবই ছিলো। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে দুই চিকিৎসের রেষারেষি কখনো তর্ক-বিতর্ক আবারো কখনো বা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। পদোন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে দন্দ্ব থাকলেও খুলনা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলোজি বিভাগ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিতে যেনো দুইজনেই সিদ্ধহস্ত। হাসপাতালের ২০০ টাকায় ইকো কার্ডিওগ্রাফি করে গরীব মানুষের উপকারের থেকে বাইরে একই রোগীকে ২ হাজার টাকায় ইকো করতে তাদের মিল রয়েছে শতভাগ। এছাড়া হাসপাতালের ১ হাজার টাকার ইটিটি বাইরে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় করতে বাধ্য হয় রোগীরা।
খুমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগটি এখন ধ্বংসের মুখে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বন্ধ আছে ইকো কার্ডিওগ্রাফি করা। ইটিটি বন্ধ আরো এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সাল থেকে। এমনকী হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের অভিযোগ, নিজেরাই এই মেশিনটি আর চালু হতে দেয়নি ডা. স ম দেলোয়ার ও ডা. মোস্তফা কামাল। দুইজনেই সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পদোন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে দন্দ্বের কথা হাসপাতালের ওপেন সিক্রেট। নামের পাশে দুইজনই হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। অন্যজন হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিখে বাইরে ভালো ব্যবসা করলেও নিজেরা হাসপাতালের সেবা ধ্বংস করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) দেখা যায়, এখানে ১০টি এসি থাকলেও সবগুলো নষ্ট। প্রত্যেক বেডে রোগী থাকলেও কোনো বেডের পাশে মনিটর সচল নাই। গরমে বাইরে ফিটফাট অর্থাৎ গ্লাস দিয়ে ঘেরা থাকায় গরমে রোগীদের হাসফাস অবস্থা। সিসিইউর ভিতরে নোংরা, প্রত্যেক রোগীর পাশে দুই তিনজন এটেন্ডেন্ট বসা কোনো নিয়ম শৃঙ্খলা নেই। দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই এটা করোনারি কেয়ার ইউনিট।
এসবের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা. মোস্তফা কামাল ও ডা. স ম দেলোর না পারলে একসঙ্গে হাসপাতালে আসেন না। দুইজনের রাউন্ড দেয়ার দিন আলাদা। দুইজন রোগীদের কাছে গিয়ে চিকিৎসার থেকে অন্য চিকিৎসকের বদনাম বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সব থেকে বড় ব্যাপার হলো সিসিইউর মত অতি জরুরি সেবায় এখানে রাতে কোনো চিকিৎসক থাকে না। দুইটার পর বেশিরভাগ সময় নার্সরাই একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে রোগীদের। তবে সদ্য যোগদান করা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিশ্বজিৎ মন্ডল একা চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারছেন না। মহারথী দুই চিকিৎসকই মেডিকেল কলেজে তার শিক্ষক ছিলেন। এই কারণে কাজের জন্য শিক্ষকদের কিছু বলা তো দুরের কথা এখানে সেবা দেয়ার মানসিকতা থাকলেও ওই শিক্ষকদের কথা মতই তাকে চলতে হয়।
ডা. স ম দেলোয়ার বলেন, এসব জিনিসপত্র নষ্ট তো আর ডাক্তাররা করেন না, ঠিকও ডাক্তাররা করেন না। অনেকবার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা না ঠিক করলে আমার কিছু করার নেই।
হাসপাতালে সদ্য ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছেন ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী। দায়িত্ব নিয়ে হৃদরোগ বিভাগ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সম্প্রতি তিনি কয়েক বার সিসিইউ ও হৃদরোগ বিভাগ পরিদর্শন করে গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে কথা বলে কাজ করানোর ব্যাপারে চেষ্টা করছেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, হৃদরোগ বিভাগের দুরাবস্থা দীর্ঘদিনের, সব পক্ষের গাফিলতি ছিলো। আমি শুধু চার্জে আছি, পরিচালক নেই তাই। তারপরও যতটুকু সম্ভব ঠিক করে দিয়ে যাবো।
স্বাআলো/এসএ