রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী নীলদরিয়া এলাকায় এক হাজার ৫০০ মিটার নতুন পাকা রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। এতে নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্র প্রাণ ফিরে পেয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হওয়ায় জনমনে স্বস্তি। খুশি নীলদরিয়াবাসী।
জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী রাজা নীলাম্বরের রাজধানীর চারদিকে পানি ও গাছপালার মাঝখানে পাহাড়ের মতো উঁচু। এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকার কারণে যুগ যুগ ধরে নীলদরিয়া এলাকাবাসী ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটছিলো। ইতোমধ্যে সরকার নীলদরিয়াকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়।
এরপরেই ব্রিটিশ আমলের রাজা নীলাম্বরের হাতে গড়া রাজধানী দেখতে রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ছুটে আসেন। অনেকই আসেন বনভোজনের আয়োজন নিয়ে কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রের একমাত্র প্রবেশ পথটি সচ্ছল না থাকায় এলাকাবাসী ও বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা অনেকটাই ভোগান্তিতে পড়তো।
পীরগঞ্জের এমপি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার নির্বাচনি এলাকায় এক পথসভায় পর্যটন কেন্দ্রের রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন, বর্তমানে আজ সেটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। নতুন এই রাস্তা পেয়ে এলাকাবাসী খুশি।
পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসা রংপুর নগরীর মুলাটোল এলাকার রিজু ইসলাম, বাহার কাছনার মাহমুদুল ইসলাম মানিক মিয়া ও লালমনিরহাটের বড় কমলাবাড়ি এলাকার শাহেদ আহমেদ শাকিল বলেন, গত দুই বছর আগে এখানে এসেছিলাম ভ্যান যোগে তাও আবার মাঝখানে পায়ে হেঁটে। এখন এসে দেখছি পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এখন ছোট্ট মিনিবাস বা পিকআপের নিয়ে আনন্দ করে আসা যাবে।
গাইবান্ধার মজুমদারহাট এলাকার ব্যবসায়ী আশিক সরকার বলেন, চতরা এলাকার নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্রটি এক বিট্রিশ আমলের রাজাদের রাজধানী হওয়ায় ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। মানুষ বিনোদনের এজন্য এখানে আছে। শিক্ষার্থীসহ অনেকেই আসেন পিকনিক করতে। রাস্তা নির্মাণ হয়েছে উদ্যাগটি ভালো। তবে নীলদরিয়াকে আরো আধুনিক করা দরকার।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজা নীলাম্বরের রাজধানী নীলদরিয়ার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন রাস্তাটি তাদের স্বস্তি ফিরে দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার ফলে এখানকার লোকজন ভোগান্তিতে ছিলো। রাস্তা নির্মাণের ফলে নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্রে এখন সারা বছরই লোকজনের সমাগম ঘটবে।
পীরগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগ উন্নয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে চতরা শিশু ক্লিনিক হতে নীলদরিয়া পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন মিটার প্রস্থের এক হাজার ৫০০ মিটার পাকা রাস্তা খিলগাঁও ঢাকা মেসার্স এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে জরিমানা আরোপ করে প্রথম চুক্তি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার করে রংপুরের মিতা এন্টারপ্রাইজ ব্যানারে কাজ সম্পন্ন করা হয়।
চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন জানান, সপ্তাহের ছুটির দিনসহ সবসময়ই নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসে লোকজন। যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বলের কারণে চরম ভোগান্তিতে ছিলো এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা। বর্তমানে নতুন পাকা রাস্তা নির্মাণের ফলে ভোগান্তি দূর করে দিয়েছে সকলের। নতুন এই যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে পর্যটন কেন্দ্রে দূর দূরান্তরের লোকজনের যাতায়াতের সুবিধা হবে।
পীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, পীরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্রটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এখানে প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন। বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারের পরামর্শক্রমে এই রাস্তাটি উন্নয়ন করা হয়েছে। সড়কটি উন্নয়ন করার কারণে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হয়েছে।
উপজেলার যে সকল রাস্তাগুলো এলজিইডি আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলোর কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রকৌশলীর টিম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
স্বাআলো/এস
