নিলুরখামার-হাসনাবাদ গণহত্যা দিবস আজ

নিলুরখামার ও হাসনাবাদ গণহত্যা দিবস আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী উপজেলার নিলুরখামার গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ৭৯ জন নারী-পুরুষকে হত্যার পর পুড়িয়ে মারে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পাকবাহিনী।

এটি নাগেশ্বরীর সর্ববৃহৎ এবং কুড়িগ্রাম জেলায় দ্বিতীয় গণহত্যার ঘটনা। একই দিনে হাসনাবাদ গ্রামের ২৯ জন নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলে পাকি বাহিনীরা। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভূরুঙ্গামারী সড়ক থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে নিলুরখামার গ্রামটির অবস্থান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিনটি ছিলো একাত্তরের ১৬ নভেম্বর, ২৬ রমজান। এই গ্রাম থেকে দুই কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ ব্রিজের পাশে খান সেনারা অবস্থান গ্রহণ করেছিলো। ওই দিন এই গ্রামের সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন নওয়াজিশের নেতৃত্বে গ্রামের একটি বাড়িতে দুপুরের আহার গ্রহণ করছিলেন। খবর পেয়ে খান সেনারা এই গ্রামের ওপর হামলা চালায়। গ্রামের অনেক ঘরবাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং একটানা গুলি করতে করতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি চালান। কিন্তু তাদের গুলির পরিমাণ সীমিত থাকায় একপর্যায়ে তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতে না পেরে খান সেনারা গ্রামের লোকজনের ওপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি করতে থাকে এবং একপর্যায়ে তারা অনেককে ধরে এই গ্রামের পাশে ঢড়কা বিলের তীরে যে বাঁশ ঝাড় ছিলো, সেখানে নিয়ে হত্যা করে। এতে গ্রামের প্রায় ৭৯ জন শহীদ হন।

১৬ নভেম্বর ১৯৭১ রাতটি ছিলো শবে-ক্বদরের রাত। ওইদিন সন্তোষপুরের আলেপের তেপথি, চরুয়াটারী, কাইটটারী, সূর্যেরকুটি, সাতানি, ব্যাপারীহাটসহ কয়েকটি গ্রামে পাকবাহিনী প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। নিলুরখামার গ্রামে পাকবাহিনী যায়নি শুনে আশেপাশের সেসব গ্রামের মানুষগুলো এ গ্রামে আশ্রয় নেয়। এ খবর জানতে পেরে পাকিরা ওই গ্রামটিকে তিনদিক থেকে ঘিরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।

পরে খান সেনারা চলে গেলে গ্রামবাসী এই শহীদের কয়েকটি কবরে মাটি চাপা দেন। এটিই উপজেলার সর্ববৃহৎ ও জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম গণকবর। সেদিনের গুলির চিহ্ন শরীরে নিয়ে এই গ্রামের অনেকে এখনো বেঁচে আছেন। সেদিনের তাণ্ডবের বিভৎস স্মৃতি নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে, আগুনে পুড়ে বেঁচে আছেন ওই গ্রামের রোকেয়া বেগম, মালেকা বেগম, জামাল, মিছির আলীসহ কয়েকজন। আগুনে পুড়ে মারা যায় আপর আলী, বাচ্চানী খাতুন, মইনুদ্দিন মুন্সী, আব্দুস সালাম মুন্সী, হাজেরা খাতুন, আজিজুর রহমান।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান নান্টু জানান, সেদিন আদিম, নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠা রাজাকার ও পাকবাহিনীর উল্লাসে প্রাণ গেছে দুই ইউনিয়নের ১০৮ জন নিরীহ নিরপরাধ মানুষের। সে দুঃষহ স্মৃতির কথা আজও ভুলিনি আমরা।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

ইজতেমার বাসে মুসল্লি সেজে মাদক পাচারের চেষ্টা, সাড়ে ১০ কেজি গাঁজাসহ যুবক আটক

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: জেলায় বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের নিয়ে...

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন: গ্রেফতার ১১, বহিষ্কার ৩

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: জেলায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়...

কবর খুঁড়তে বেরিয়ে আসলো সাদা কাপড় মোড়ানো পুতুল ও তাবিজ

কুড়িগ্রামের কবর খুঁড়তে বেরিয়ে আসলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো পুতুল...

প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার কিশোরী

কুড়িগ্রামে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার...