তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে দিশেহারা মানুষ

তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে কুড়িগ্রাম তীব্র হয়ে উঠেছে নদী ভাঙন। জেলার রাজারহাটের তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ইতোমধ্যেই অসংখ্য বসতবাড়ি এবং আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কচাকাটা ও নারায়নপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ।

কুড়িগ্রামের ১৬টি নদীতে মৃদু ভাঙন দেখা দেয়ায় দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, ধরলা ও তিস্তা নদীর তীরবর্তী মানুষরা বসতভিটা ফসলি জমি নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং হ্রদে পানির বৃদ্ধির ফলে সেখানকার বাঁধ খুলে দেয়ায় কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও আমন ধান, আলুসহ বিভিন্ন ফসলি জমিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় বাড়ছে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন।

ইতোমধ্যেই তিস্তার ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ বুড়িরহাট, নামা ভরট, গতিয়াসাম, চর খিতাবখাঁ এবং উলিপুর উপজেলার তিস্তাপাড়ের অসংখ্য বাড়িঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, গাছপালা ও ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে বসতভিটা ছেড়ে অনেকে চলে যাচ্ছেন অন্যান্য স্থানে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে কচাকাটা ও নারায়নপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকিতে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ।

গত ১০ দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমন্ডল ও নাগেশ্বরীর ব্যাপারীরচর, ফকিগঞ্জ, নারায়নপুর এবং উলিপুর, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, ধরলা, তিস্তা নদে ভাঙনের বসতভিটা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ফুলবাড়ির চর গোরকমন্ডল এলাকায় দুর্ভোগ আর করুণ অবস্থা বিরাজ করছে।

ইতোমধ্যে ধরলা নদীর ভাঙনে এই এলাকায় অসংখ্য পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০০ বিঘা কৃষি জমি। জমি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক কৃষক। ভাঙন কবলিতদের নিজস্ব জমিজমা না থাকায় নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশে ফেলে রেখেছে। তবে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধে কিছুটা সফল।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চর ভগবতীপুরে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়ে আছে চর ভগবতীপুর কমিউনিটি ক্লিনিক সহ আশপাশের চারটি গ্রাম।

নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্যাপীরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চর নুনখাওয়া প্রাইমারীর শিক্ষক জিয়াউল ইসলামের বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এবং আশপাশের প্রায় ৫০টি বসতবাডড়ি ইতোমধ্য নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ভুক্তভোগী অনেকে জানান, নদীর ভাঙন যেভাবে শুরু হয়েছে এতে করে আর বাপ-দাদার ভিটা বিলীন হয়েছে। তাই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট উধ্বতর্ন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, জেলার বৃহৎ তিস্তা, ধরলা এবং ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর ২৭ কিলোমিটার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে অনেক অংশের ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন মোকাবেলায় পর্যাপ্ত মালামাল মজুত রয়েছে।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

ইজতেমার বাসে মুসল্লি সেজে মাদক পাচারের চেষ্টা, সাড়ে ১০ কেজি গাঁজাসহ যুবক আটক

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: জেলায় বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের নিয়ে...

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন: গ্রেফতার ১১, বহিষ্কার ৩

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: জেলায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়...

কবর খুঁড়তে বেরিয়ে আসলো সাদা কাপড় মোড়ানো পুতুল ও তাবিজ

কুড়িগ্রামের কবর খুঁড়তে বেরিয়ে আসলো সাদা কাপড়ে মোড়ানো পুতুল...

নিলুরখামার-হাসনাবাদ গণহত্যা দিবস আজ

নিলুরখামার ও হাসনাবাদ গণহত্যা দিবস আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর)।...