সরকারি গাছ বিক্রি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ যশোর জেলা পরিষদের কর্মচারীর বিরুদ্ধে

যশোর জেলা পরিষদের অফিস সহায়ক সরোয়ার উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তার লক্ষাধিক টাকা মূল্যের রেইনট্রি কড়ই গাছ চুরি করে বিক্রি এবং এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। লিখিত অভিযোগে জোরপূর্বক নেয়া টাকা ফেরৎ এবং সরকারি গাছ অবৈধভাবে চুরি করে বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বুন্দেলীতলা গ্রামের ফরজ আলী নামে এক চা’দোকানী চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগ যশোরের ডিসি এবং যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও জমা দিয়েছেন তিনি।

চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লিখিত অভিযোগে ফজর আলী বলেন, আমার বাড়ি বুন্দেলীতলা গ্রামে। চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে আমার বাড়ির সামনে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে একটি অনেক বড় রেইনট্রি কড়াইগাছ ছিলো। যার দাম আনুমানিক এক লাখ টাকা। গাছটির জন্য আমার বসতবাড়ির ক্ষতি হচ্ছিলো। এ অবস্থায় আমি গাছটি কেটে নিতে জেলা পরিষদের কর্মচারী (অফিস সহায়ক ও কর্মচারী সমিতির নেতা এবং চৌগাছার স্বরুপদাহ গ্রামের বাসিন্দা) সরোয়ার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে অনেক দেন দরবারের পর আমি অনেক কষ্টে তাকে ৪ হাজার ৭০০ টাকা প্রদান করি। এরপর গত ১২ নভেম্বর রবিবার স্বরুপদাহ গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে হাসান এবং মোশারেফের ছেলে শাহাআলম গাছটি আমার বাড়ির সামনে থেকে কেটে নিয়ে যায়। গাছটি সরকারি গাছ। আমার গাছটিতে কোনো দাবি নেই। তবে এই গাছটি সরিয়ে নিতে টাকা লাগে বিষয়টি আমি জানতাম না। সরোয়ার আমাকে মিথ্যা হুমকি-ধামকি দিয়ে ৪ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে এবং সরকারি গাছ অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি আমার টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা এবং সরকারি গাছ অবৈধভাবে চুরি করে বিক্রি করে দেয়ার বিচার প্রার্থনা করছি।

উল্লেখ্য, জেলা পরিষদের কর্মচারী সরোয়ার প্রায়’ই এই এলাকার বিভিন্ন রাস্তার (চৌগাছা-মহেশপুর, চৌগাছা-পুড়াপাড়াসহ) সরকারি গাছ জেলা পরিষদের দোহাই দিয়ে এভাবে চুরি করে বিক্রি করে দেয়। যা তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে। আমি এই অসাধু কর্মচারীর সঠিক বিচার দাবি করছি।

সরোয়ারের গ্রামের লোকজনসহ স্বরুপদাহ, নারায়ণপুর ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের লোকজনসহ চৌগাছা বাজারের বিভিন্ন দোকানিরাও নিশ্চিত করেছেন সরোয়ার বিভিন্ন সময়ে চৌগাছা বাজারসহ বিভিন্ন রাস্তার বিশেষ করে চৌগাছার কপোতাক্ষ পারের তিন ইউনিয়নের রাস্তার সরকারি গাছ একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা পরিষদের দোহাই দিয়ে চুরি করে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে গাছে যে সকল বাসিন্দাদের অসুবিধা হয় তাদের কাছ থেকে সরোয়ার ৫/১০ হাজার বা তারও বেশি টাকা কন্টাক্ট করেন। এরপর কাঠ ব্যবসায়ী হাসান এবং শাহাআলম গাছটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। তারা জানান, সরোয়ার এই গাছ বিক্রির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা বিভিন্ন রাস্তার সরকারি গাছ এভাবে কেটে বিক্রি করে দেয়। স্বরুপদাহ গ্রামের লোকজনের দাবি, সরোয়ার বিভিন্ন সময়ে জেলা পরিষদের অর্থে গ্রামের ঈদগাহ এবং হাফেজী মাদরসাসহ বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন কাজ করেছেন। তবে সেসব উন্নয়ন কাজের স্থানে সরোয়ার নিজের নামে নামফলক তৈরি করে খোদাই করে লিখে রেখেছেন অর্থায়নেঃ সরোয়ার উদ্দীন। সরোয়ারের এসব অনৈতিক কার্যক্রমের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তার গ্রামের লোকজন।

এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে সরোয়ার উদ্দিনের মোবাইল নাম্বারে একাধিক বার কল করলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বুধবার এ বিষয়ে অভিযুক্তদের ডেকে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনি ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

প্রাথমিকের ক্লাস শুরু কাল

ঢাকা অফিস: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (৭ মে)...

সাত দিন ঝড়-বৃষ্টির আভাস, কালবৈশাখীর সতর্কবার্তা

ঢাকা অফিস: কালবৈশাখী ঝড় নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া...

বৃষ্টি নেই, তাই দেশি ইলিশও নেই

ঢাকা অফিস: দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা আশায় ছিলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ...

যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিপুলের গণসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা,...