স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের জেলা যশোর

আজ বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে যশোর জেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। যদি বলা হয় আজ যশোরবসীর গৌরবের দিন তাহলে এ অর্জনকে খাটো করা হবে। দিনটি বাঙালি জাতির গর্বের দিন।

জাতির প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদার বাহিনীকে উৎখাত করার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো সে সংগ্রামের বিজয় আসে যশোরের পথ ধরে। যশোরকে হানাদারমুক্ত করতে তো শুধু যশোরবাসী লড়াই করেনি। করেছে বিভিন্ন প্রান্তের মুক্তিপাগল মানুষ তথা মুক্তিযোদ্ধারা।

এই যশোরের সেনানিবাসে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছেন কুমিল্লার কৃতী সন্তান বীর উত্তম সেকেন্ড লে. আনোয়ার হোসেনসহ আরো ৪০ যোদ্ধা, নড়াইলের কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ। আরো নাম না জানা অনেকে আছেন, যাদের মধ্যে কেউ শহীদ আবার কেউ বেঁচেও থাকেন।

তাই সর্বপ্রথম যশোর মুক্ত মানে সারাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের বিজয় হওয়া।

৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পর্যদস্তু হানাদার বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালাতে শুরু করে।

যশোর সেনানিবাস ছেড়ে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে চলে যেতে থাকে। পলায়নকালে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস খালি করে পালিয়ে যায় পাক হানাদাররা। বিকেলে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে দখল নেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে শহরে। পাড়া মহল্লায়ও চলে খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ফেটে পড়ে গোটা জেলার মানুষ। ৩ মার্চ যশোর কালেক্টরেটের সামনে শহরের রাজপথে বের হয় জঙ্গি মিছিল।

যশোরবাসী শপথ নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের। এই মিছিলে হানাদার বাহিনী গুলি চালালে শহীদ হন চারুবালা কর। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনিই যশোরের প্রথম শহীদ। এরপর থেকেই যশোরে সংগঠিত হতে থাকে প্রতিরোধ। নেতৃত্ব দেয় সংগ্রাম পরিষদ। সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতে থাকে ছাত্র, যুবক ও মহিলাদের। ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী তদানীন্তন জাতীয় সংসদ সদস্য জননেতা মশিয়ূর রহমানকে তার বাসভবন থেকে ধরে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২৯ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী যশোর শহর ছেড়ে সেনানিবাসে চলে যায়। ৩১ মার্চ নড়াইল থেকে হাজার হাজার লোকের এক বিশাল মিছিল শহরে আসে। শহরবাসীর সাহায্যে সশস্ত্র মিছিলটি হামলা চালায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। মুক্তি পায় সব রাজবন্দী। মার্চের দিনগুলোতে তৎকালীন ইপিআর বিদ্রোহ ছিলো অন্যতম। সামরিক, বেসামরিক স্বাধীনতাকামী মানুষের অকুতোভয় লড়াইয়ে এক সগর রক্তের বিনিময়ে যে দিনটিতে জাতি স্বাধীনতার সূর্য দেখেছিলো সেই ঐতিহাসিক দিন আজ ৬ ডিসেম্বর। আজকের দিনে স্বাধীনতার স্বাদ সব মানুষের কাছে পৌছানের শপথ হোক আমাদের।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে যশোরের তিন উপজেলায় ৩৯ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপের সদর,...

খুলনাসহ চার বিভাগে আরো ২ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

ঢাকা অফিস: সদ্যই শেষ হলো মৌসুমের সবচেয়ে উত্তপ্ত মাস...

বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির নির্বাচনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা

মিলন হোসেন, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: আগামী ৪ মে বেনাপোল...

তাপপ্রবাহে গলছে যশোর সড়কের পিচ, তদন্তে দুদক

যশোরে দাবদাহে পিচ গলা সড়ক তদন্তে নেমেছে দুদক। বৃহস্পতিবার...