আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছাবে যশোরের কৃষি পণ্য

পদ্মা সেতুর মতো পদ্মা রেল সেতুও দক্ষিণাঞ্চলে সাথে রাজধানীর যোগাযোগ আরো সহজ হবে। এই রেল প্রকল্পে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল যশোরের ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় হবে যশোরের সাথে রেলপথে পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানীর যোগাযোগ। পণ্য পরিবহন খরচ অনেকটাই কমে আসবে।

যশোর শহরের প্রাচীন রেল স্টেশন যশোর জংশন। এ স্টেশনের সাথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাতায়াতে রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অঞ্চলের কৃষিখাতেও রয়েছে দেশব্যাপী সুনাম। দেশের প্রায় সিংহভাগ চাহিদা মেটায় বৃহত্তর যশোরের কৃষিখাত। এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় এখানকার সবজি, ফুল ও মৎস্য। যশোরে রয়েছে বেনাপোল বন্দর, নৌয়াপাড়া নৌ বন্দর ও বসুন্দিয়া বাজার। যেখানে গ্রীষ্মকালীন ফল নারকেল, কাঠালসহ বিভিন্ন ধরণের ফলের মোকাম রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে অরো সমৃদ্ধ হবে গোটা যশোর অঞ্চল।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সদস্য হুমায়ুন কবির কবু বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় দক্ষিনাঞ্চল তথা যশোরের ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিধি গত এক বছরে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। বর্তমানে ভাঙা পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এটি যশোর পর্যন্ত বর্ধিত হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের যশোর মাছ, ফুল ও সবজিতে বিখ্যাত। যশোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালু হলে দ্রুত সময়ে এগুলো রাজধানীতে পৌছাতে পারবে। পাশাপাশি এগুলো বহনের জন্য আমরা আগে থেকে ট্রেনে বিশেষ ওয়াগনের দাবি জানাই।

কৃষকরা বলছেন, রেল চালু হলে সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহে কমবে খরচ। এতে তাদের লাভ বেশি হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বৃহৎ সবজির মোকাম সাতমাইলের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, গত বছরও আমাদের সবজি ঢাকায় পাঠাতে গেলে সড়কে ভোগান্তিতে পড়তে হতো, ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় যানজটে সবজি পচন ধরতো। পদ্মা সেতু চালুর পরে এ ভোগান্তিটা কমে গেছে।

আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক বাশার শেখ বলেন, ট্রেন চালু হলে সকালে মাঠ থেকে তোলা সবজি দুপুরে ঢাকার কাঁচাবাজার ধরতে পারবে। এমনকি আমরাও সবজি নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করতে যেতে পারবো। এতে বহন খরচ কমবে লাভের পরিমাণও বেশি হবে।

শুধু সবজিতেই নয় মৎস খাতে ও পাবে এর সুফল। মৎস ব্যবসায়ী নেতারা বলছে, রেল ব্যবস্থায় যাতায়াতের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহণে খরচ কমে। এত ভোক্তা পর্যায়ে পাবে সুফল।

যশোরের চাঁচড়ার মৎস ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম রবি বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে আমরা ট্রাকে করে অল্প সময়ে ঢাকায় মাছ পাঠাই। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে যশোরের সাথে রেল যোগাযোগ শুরু হলে আমরা ট্রেনে ওয়াগনে করে মাছ পাঠাতে পারবো। তখন সময় লাগবে আড়াই ঘন্টা। যেখানে বহন খরচ আগে ছিলো ২০ হাজার সেখানে বহন খরচ হবে ১০-১৫ হাজার। ফলে চাষি ও ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমান বেশি থাকবে।

যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব অনেকটাই কমে আসবে। যাতায়াতে মানুষের দূর্ভোগ কমবে বলে দাবি যাত্রী ও রেল কর্মকর্তাদের। যশোর রেল স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রী মইনুল হোসেন বলেন, যশোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে আমরা সকালে যশোর থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরতে পারবো। শুধু তাই নয় অনেক ভোগান্তি কমে যাবে।

আরেক যাত্রী হাবিব উল্লাহ বলেন, আমরা ২ বছর আগে কল্পনাও করতে পারিনি যে আড়াই ঘণ্টায় যশোর থেকে ঢাকা যেতে পারবো। এখন বাসে পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। ট্রেন চালু হলে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা।

যশোর রেল স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, বর্তমান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের জন্য যে উন্নয়ন কাজ করেছে তার একটি বড় উদাহরণ হলো এই পদ্মা সেতু। এ পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব হবে মাত্র ১৭২ কিলোমিটার। ফলে যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। এদিকে ঢাকার সাথে যশোরের দূরত্ব কমবে প্রায় ৫২ কিলোমিটার। এই রেলপথ চালু হলে যেমন যাত্রীদের যাতায়াত সহজতর হবে তেমন যশোর আরো উন্নয়নের রোল মডেল হবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

স্বাআলো/এসএস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

যারা একবেলা ভাত খেতে পারতো না, তারা এখন চারবেলা খায়: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে...

বেড়েছে ডিম ও কাঁচা মরিচের দাম

ঢাকা অফিস: বাজারে মুরগির ডিম ও কাঁচা মরিচের দাম...

দেশজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ, দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস

ঢাকা অফিস: ঢাকাসহ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম...

যশোরের নরেন্দ্রপুর ও বসুন্দিয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী বিপুলের পথসভা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নে পথসভা করেছেন...