বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলের স্বীকৃতি পেলো বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এই স্বীকৃতি দিয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র পক্ষ থেকে এই স্বীকৃতির সনদপত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
ভারতের নয়া দিল্লিতে ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে এই স্বীকৃতির সনদপত্র তুলে দেন সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম খেত্রপাল। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস উপস্থিত ছিলেন।
সনদ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে বাংলাদেশ ফাইলেরিয়া ও পোলিও নির্মূল করে সনদ পেয়েছিল। এবার বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বে প্রথম হওয়ায় সনদ পেয়েছে। এটি একটি জাতিগত প্রশংসা অর্জন। এ অর্জনে দেশের স্বাস্থ্যখাতসহ আমরা সবাই গর্বিত।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অর্জনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পরামর্শ ও নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এর আগে একই দিনে (৩০ অক্টোবর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে দেশের প্রাইমারি স্বাস্থ্যসেবায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা তথ্য তুলে ধরেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন ভরসার জায়গা হতে পেরেছে। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য শেখ হাসিনার বিশেষ অবদান দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। এর প্রতিটি থেকে ওই এলাকার প্রায় ছয় হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের দুর্গম এলাকাতেও প্রস্তুত করা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। ক্লিনিকগুলো থেকে ৩০ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি গ্রামের মায়েদের নিরাপদ সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেও কমিউনিটি ক্লিনিক কাজে লাগছে। এর সুফল হিসেবে গত কয়েক বছরের জরিপে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ৩২০ জন থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ১৬৩ জন হয়েছে। একইভাবে প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মৃত্যুহার ৬৫ জন থেকে হ্রাস পেয়ে ২৮ জনে নেমে এসেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনেসিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও জাহিদ মালেক বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস, শিশুমৃত্যুহার হ্রাস করা, গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদানে বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ সফলতা, করোনাকালীন দুর্যোগে ১৫ হাজার চিকিৎসক, ২৫ হাজার নার্সসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান।
সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহাদত খন্দকার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় সময় সকাল ১০টায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬ তম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক বাংলাদেশের প্রাইমারি স্বাস্থ্যসেবাসহ স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন অর্জন এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের বিশেষ উদ্যোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, পূর্ব-তিমুর, উত্তর কোরিয়াসহ ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাআলো/এসএ
