হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: আজ ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লালমনিরহাট জেলা শত্রুমুক্ত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই এবং মুক্তিকামী জনতার দুর্বার প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদারবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিলো লালমনিরহাট জেলা। সেই ৬ নম্বর সেক্টরের সদর দফতর ছিলো লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এম খাদেমুল বাশার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৬ নম্বর সেক্টরের সদর দফতরটি ছিলো চির শত্রুমুক্ত। এই এলাকাটিতে পাকসেনারা কখনই প্রবেশ করতে পারেনি। অপরদিকে রেলওয়ের বিভাগীয় শহর হওয়ায় লালমনিরহাট এলাকাটি ছিলো বিহারি অধ্যুষিত। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় বর্বর পাকবাহিনী এবং একাত্তরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ।
চূড়ান্ত বিজয়ের আগ মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে চারদিক থেকে লালমনিরহাট শহর ঘিরে ফেলেন।
সদর উপজেলার হারাটি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, লালমনিরহাটে বিহারিদের নির্যাতন ছিলো ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম। তারা বহু নারীকে ধর্ষণ করে। আবালবৃদ্ধবনিতা কাউকেই হত্যা করতে ছাড় দেয়নি। বিশেষ করে রাজাকারদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার সদস্যদের ধরে এনে ব্যায়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলতো।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদর উপজেলা কমান্ডার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সদর উপজেলার বড়বাড়ি থেকে একটি দল, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থেকে কুলাঘাট হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল, মোগলহাটের বুমকা ও ভারতের গিতালদহ থেকে দুইটি দল, আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি থেকে আরো একটি দল লালমনিরহাট শহরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, তৎকালীন বিডিআর ক্যাম্প এলাকায় রাতভর খানসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ৬ ডিসেম্বর ভোর ৬টায় পাকসেনা, রাজাকার, আলবদর এবং তাদের দোসররা দুইটি স্পেশাল ট্রেনে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তিস্তা নদী পেরিয়ে পাকসেনারা তিস্তা রেলসেতুর একটি গার্ডারে বোমাবর্ষণ করে সেতুর ব্যাপক ক্ষতি করে চলে যায়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এস. এম. শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, ১৯৭১ এর এই দিনে লালমনিরহাটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। শত্রুমুক্তের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে লোকজন ছুটে আসতে থাকেন শহরের দিকে। সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। স্লোগানে মুখরিত হয় শহর ও আশপাশের গ্রাম। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পতাকা নিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকেন সব শ্রেণির মানুষ। জেলার বিভিন্ন স্থানে হয় আনন্দ মিছিল। ৭ ডিসেম্বর বাঁধভাঙা জোয়ারে জয় বাংলা ধ্বনি উচ্চারিত হয়।
স্বাআলো/এসএ