ঢাকা অফিস: দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র মাহে রমজান। মাসটিকে ঘিরে প্রত্যেক পরিবারেই পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। তবে সাধারণ মানুষের এই প্রস্তুতিকে পুঁজি করে ছোলা, ডাল, চিনিসহ রোজায় ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
যদিও দফায় দফায় সরকারের ঘোষণা ছিলো রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু এসব ঘোষণার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখা যায়নি।
বরাবরের মতো এবারো রোজার আগেই বাজারে সক্রিয় হয়েছে অতি মুনাফালোভী চক্র।
শুক্রবার (৮ মার্চ) বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
রোজা সামনে রেখে আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার করে রাখেন মানুষ। বিশেষ করে রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, চাল, ডাল, ছোলা, বেসন, চিনি ও পেঁয়াজের ওপর একটু বেশি চাপ পড়ে। রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাজার ঘুরে শুরু হয় কেনাকাটা। ক্রেতাদের পূর্ব প্রস্তুতিতে প্রতিবারের মতো এবারো দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
চিনি, চাল-ডালসহ প্রতিটি পণ্যের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
পেঁয়াজের দামে উত্থান-পতন
সরকারের বেঁধে দওয়া দেশি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দাম কমতে শুরু করে। এক সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০-১২০ টাকা কেজিতে, গত দুইদিন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকায়। তবে রোজার আগ মুহূর্তে শুক্রবার থেকে আবারো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও আজ ৯০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই দামে বিক্রি করলেও কোনো লাভ থাকছে না।
এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। কারণ মুড়িকাটা পেঁয়াজ একেবারে শেষ দিকে। এ কারণে বাড়তি দাম যাচ্ছিল পেঁয়াজের। প্রধান জাতের পেঁয়াজ অর্থাৎ হালিকাটা পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত এলেই দাম কমে যেত। এর মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার খবরে এখনই দাম কমতে শুরু করেছে। আশা করছি ৪-৫ রোজা থেকেই পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি আরো ১০-১৫ টাকা কমে যাবে।
রমজান মাসকে সামনে রেখে সরকার চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই, উল্টো দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। এর ওপর নতুন করে একটি সুগার মিলের অগ্নিকাণ্ডকে পুঁজি করে বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ আগেও যেখানে খোলা চিনি কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত, সেখানে রোজার আগ মুহূর্তে কেজি প্রতি চিনির দাম উঠেছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা।
লাগামহীন দামের আঁচ ডাল-ছোলা-বেসনে
রমজান মাসকে ঘিরে অন্যান্য দ্রব্যের ন্যায় লাগামহীন দামের আঁচ পড়ছে ডাল, ছোলা আর বেসনের দামে। ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত কয়েকদিনে ডালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে বেসনের দাম। ভালো মানের ছোলার দামও নতুন করে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
শুল্কমুক্ত ছোলা আমদানি, সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা
রমজানের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছোলা। রমজান উপলক্ষ্যে ভারত থেকে এক সপ্তাহে এক হাজার ৪০৩ টন ছোলা আমদানি করা হয়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচা ছোলা আমদানির সুযোগ দিলেও তার সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। গত বছর বাজারে এ সময় ছোলার কেজি ছিলো ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। সেই হিসাবে এবার কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেশি হওয়ায় ছোলা আমদানি করতে হয়েছে বেশি দামে। যে কারণে দামও তুলনামূলক একটু বেশি। তবে রোজা শুরু হলেই আবার দাম কমে আসবে।
স্বাআলো/এস