বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় রাস্তার পাশের সরকারী বৃক্ষ নির্বিঘ্নে কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় গাছখেকোরা। কোনো অনুমতি ছাড়াই পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের কাজের দোহাই দিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে রাস্তার পাশে থাকা এনব সরকারি গাছ কর্তন করা হচ্ছে।
উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নের কচুয়া-আন্ধারমানিক সড়কের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের বাড়ি থেকে শুরু করে পঙ্গু মার্কেট নামক স্থান পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ থেকে বনবিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে ৪০ থেকে ৫০টির মতো মূল্যবান শিরিস ও মেহগনী গাছের আংশিক, আবার কয়েকটি গাছের পুরোপুরি কেঁটে ফেলা হয়েছে। সেই সাথে কর্তনকৃত গাছের অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। আর এই কাজে বিদ্যুৎ লাইনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ফোরম্যান এবং তার সহযোগীরা জড়িত বলেও খবর পাওয়া গেছে। কর্তনকৃত গাছের বেশ কয়েকটি টেন্ডারে বিক্রির জন্য প্রক্রিয়াধিন রয়েছে, যা সরকারীভাবে গাছ গুলোতে নাম্বারিং করা রয়েছে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দেখা যায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাছের অংশ কেটে ফেলা হয়েছে এবং ওই সব গাছের বড়-বড় লখসহ গাছের ডালপালা ফোরম্যান সহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রি করে ফেলা হয়েছে এবং কিছু গাছের অংশ সরিয়ে ফেলতেও দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, গাছ কর্তন ঘটনার খবর পেয়ে কচুয়া বনবিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যায় এবং গাছ কাটার বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের কাজের সাথে যুক্ত ফোরম্যানের সাথে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের কাজে যুক্ত ফোরম্যান হুমায়ুন গাছ কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিদ্যুতের লাইন টানতে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ায় দুইদিন ধরে আমরা ৫০টির মতো গাছ কেঁটেছি। সরকারি ছুটি থাকায় এ বিষয়ে স্থানীয় বনবিভাগের কাছ থেকে আমরা কোনো অনুমতি নিতে পারিনি এটা আমাদের অপরাধ হয়েছে। কেঁটে ফেলা গাছের অংশ আমরা স্থানীয় বনবিভাগের সভাপতির কাছে দিয়েছি। গাছ কাটার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।
বিদ্যুৎ লাইনের কাজের সাথে যুক্ত সুপারভাইজার রকি বলেন, আমরা যে গাছ কেটেছি তা স্থানীয় লোকজন নিয়ে গেছে, কে বা কারা নিয়েছে তা সঠিক ভাবে বলতে পারবো না, কিছু গাছ আমরা স্থানীয় একজনের কাছে দিয়েছি সে নাকি বনবিভাগের সাথে যুক্ত তবে তার নাম পরিচয় জানা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রর্ত্যক্ষদর্শী জানান, একজনে প্রায় ৫০ মন গাছের ডালপালা ৪ হাজার ৫০০টাকায় ক্রয় করেছে। অন্য গাছকে কোথা থেকে নিয়েছে আমি জানিনা।
স্থানীয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, আমি রাস্তার পাশের এ গাছ কাটার বিষয় কিছু জানি না। তবে রাস্তা থেকে কেটে ফেলা গাছ গুলোকে কয়েকজনকে সরিয়ে ফেলতে দেখেছি। এখন তারা নিয়েছে না কে নিয়েছে আমি জানিনা। যদি এটা বেআইনি ভাবে কাটা হয় তবে এর তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্থানীয় অপর একজন বলেন, আমার ঘরের পাশের রাস্তার পাশ থেকে যে গাছ কাটা হয়েছে তার কয়েকটি অংশ আমি নিতে চাইলে আমাকে বাঁধা দেয় এবং গাছ নিতে টাকা দাবি করে।
স্থানীয় সন্মানকাঠি ভ্যান স্ট্যান্ডের একজন দোকান ব্যাবসায়ী বলেন, আমরা গাছগুলো কাটতে দেখেছি তবে কে নিয়েছে দেখিনি স্থানীয় একজন এগুলো নিয়েছে তবে এর সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিকেরা জড়িত রয়েছে।
রফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, যে নিয়মে গাছ কাটার কথা সে অনুযায়ী গাছগুলো কাটা হয়নি এবং আমার নিজের গাছের অংশও কে বা কারা কেটে নিয়েছে আমি গাছগুলো পাইনি। বিদ্যুৎ লাইনের কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন ঠিকাদারের মাধ্যমে এ কাজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে কচুয়া পল্লী বিদ্যুতের এজিএম নাজমুল হাসান বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। যদি এমন ঘটনা সত্যি হয়ে থাকে এটা অন্যায়। আমার জানা মতে এক্সচেঞ্জের সুপারিশ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত দিয়ে অনুমতি নিয়ে সাধারণত গাছ গুলো কাটা হয়ে থাকে।
মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে জোয়াদ্দার ফার্মের সত্বাধীকারী মিজান জোয়াদ্দার বলেন, আমাদের লোকের কোনো গাছ কাটার কথা নেই। যদি আমার কোনো কর্মচারী ভূলবসত কেটে থাকে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাখি ব্যানার্জি বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে কেউ কোনো অনুমতিও নেননি।
স্বাআলো/এসএস
