আওয়ামী লীগের মনোনয়ন: নতুন মুখ আসছে যেসব আসনে

খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই তিন বিভাগের বেশ কিছু আসনে নতুন মুখ আসছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হয়। এর আগের দিন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পর দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টায় গণভবনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অন্যদিকে দলটির সূত্রগুলো জানিয়েছে, রবিবারই ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে।

দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য মনোনয়ন বোর্ড শুক্রবার কোথায় বৈঠক করেছে এবং কোন কোন বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে, বিষয়টি গোপন রেখেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকেলে ধানমন্ডিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিভাগ বললে নাম জানার জন্য নেতারা পীড়াপীড়ি করেন। এ জন্যই কিছুটা গোপনীয়তা।

তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের ঘনিষ্ঠরা বেশ কিছু আসনে পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলছেন। দলের নেতারাও নতুন যেসব মুখ আসতে পারে, সেগুলো নিয়ে দিনভর আলোচনা করেছেন। এসব সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শুক্রবার বরিশাল জেলায় দুইটি আসনে পরিবর্তনের আভাস এসেছে। এর মধ্যে একটি আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন নারী নেত্রী মনোনয়ন পাচ্ছেন। বরিশালের আরেকটি আসনে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতার জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে বেছে নেয়া হয়েছে।

যশোরে একটি আসনে সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন বলে জানা গেছে। ওই আসনে মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্যের মেয়ের জামাইকে বেছে নেয়ার কথা এসেছে। ময়মনসিংহে একজন তরুণ সংসদ সদস্যের বাদ পড়ার কথা আলোচনা আছে। তবে তার জায়গায় কে পাচ্ছেন, সেটা জানা যায়নি। জামালপুরে সাবেক এক শীর্ষ আমলা পাচ্ছেন, এটাও নিশ্চিত হয়েছে। ওই জেলার আরেকটি আসনে টানা বহুবারের একজন সংসদ সদস্যের বাদ পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ভোলায় একটি আসনে পরিবর্তনের আলোচনা আছে।

ঢাকায় অথবা মাগুরার একটি আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কত নায়ক-নায়িকা এমপি। তারা তো সরাসরি দল করেন না। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। আর সাকিব আল হাসান রাজনীতি করবেন, জনগণের সেবা করবেন। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় তিনি দাঁড়াতে পারেন।

শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রার্থী তালিকা নিয়ে গোপনীয়তার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যখন বিভাগের নাম ঘোষণা করি, তখন ভিড় বেড়ে যায়, নির্দিষ্ট বিভাগ শুনলে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায়। কীভাবে নাম বের করা যায়। সে কারণে বিভাগের নাম ঘোষণা করছি না।

তিনি আরো বলেন, নতুনও এসেছে, বাদও পড়েছে। নির্বাচনে জিতবে, যারা ইলেকটেবল, তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা মনোনয়নের ব্যাপারটাকে সুনির্দিষ্ট করে এখন বলছি না, কারণ, এর মধ্যে আমরা যেসব প্রার্থী দিয়েছি, সেসব মনোনয়নে ভুলত্রুটিও থাকতে পারে। সেটাও আমাদের সংশোধনের একটা সুযোগ রেখেছি। এ কারণে আমরা ঠিক করেছি ভিন্নভাবে, জেলা বা বিভাগওয়ারি প্রার্থিতা ঘোষণা করবো না। আমরা একসঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে চাই।

যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তারা জয়ী হওয়ার মতো না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না।

উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আবার দাঁড়াচ্ছেন। তারা এখানে মনোনয়ন চাইবেন, আমরা তাদের এখানে মনোনয়ন দিতেও পারি। কারণ, তারা তো কাজ করার কোনো সুযোগ পাননি। সেই সুযোগ দেয়ার বিষয়টি যদি আমরা মনে করি, এই প্রার্থী এলাকাকে, পার্টিকে কিছু দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করবো।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি আসবে না, সে কথা বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। বিএনপির এখনো আসার সুযোগ আছে। হয়তো বিএনপি দলীয়ভাবে, জোটগতভাবে নাও আসতে পারে। বিএনপির ভেতর থেকে অনেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে খবর আছে। তারা প্রার্থী হিসেবে অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। শেষ মুহূর্তে ছবিটা কোন পর্যায়ে যায়, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

জনপ্রিয় নন, এমন প্রার্থীকে অন্য দল থেকে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করার ইচ্ছা নেই বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শরিক দল হোক আর যে হোক, আমাদের বিবেচনায় যেটা আসবে, আমি আমার দলে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বাছাই করছি। অন্য দল থেকে এলেও তার জনপ্রিয়তা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে, তারা তাদের মন্তব্য ব্যক্ত করেছে। ইসলামি দলগুলো নির্বাচনে আসবে।

আওয়ামী লীগ এখন ৩০০ আসনেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, পরে জোটের শরিক ও মিত্রদের যেসব আসনে ছাড় দেয়া হবে, সেগুলোতে দলের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দেখে বিএনপির মাথা খারাপ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক দেখে বিএনপির মাথাটা...

শিক্ষার্থীরা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাবেন চিকিৎসা অনুদান, আবেদন যেভাবে

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট দরিদ্র ও মেধাবী...

তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেলো ৭ জনের

তিন জেলায় বজ্রপাতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ মে)...

নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সেবা ও অভিযোগ মিলবে ৯৯৯ নম্বরে

ঢাকা অফিস: চলমান ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগের দুদিন,...