২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ শেষ হয়েছে ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই শুরু হয়েছে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর)। যা চলবে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।
সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার যোগ্যতা সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে-
১. প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স ২৫ বছর হতে হবে।
২. দেশের কোনো আদালত কর্তৃক ওই ব্যক্তিকে অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল বলে ঘোষণা করা না হলে।
একজন প্রার্থীর সংসদ নির্বাচন করার যোগ্যতা দুইটি হলেও ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ ধারা অনুযায়ী, ১২টি কারণে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন না যদি-
১. প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকার ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত না থাকলে।
২. কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন না পেলে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে।
৩. নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধের দায়ে দুই বছরের কারাদণ্ডের পর মুক্তি পাওয়ার পাঁচ বছর পার না হলে।
৪. বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার বা ঘোষণা করলে।
৫. সরকারের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।
৬. যেকোনো কারণে কোনো আসনে তার নির্বাচন অবৈধ বলে ঘোষিত হলে এবং এই ঘোষণার পর পাঁচ বছর পার না হলে।
৭. দুর্নীতির কারণে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত বা অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হলে এবং ওই ঘটনার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে।
৮. সরকারি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের কোনো চাকরি থেকে পদত্যাগ বা অবসরের পর তিন বছর পার না হলে।
৯. সরকারের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত থাকলে।
১০. বিদেশি কোনো রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান বা তহবিল গ্রহণ করে-এমন কোনো বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদে কর্মরত থাকলে।
১১. এমন কোনো কোম্পানি বা ফার্মের অংশীদার হলে- যারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ বা কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে।
১২. ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সরকারের সেবাদানকারী কোন সংস্থানের কোনো বিল মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে সাত দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে।
প্রার্থী হিসেবে কেউ যোগ্য হলে পরবর্তী ধাপ হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত নির্দেশিকার তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রে প্রার্থীর নাম, ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মতারিখ, ভোটার নম্বর, ভোটার তালিকায় ক্রমিক নম্বর, ভোটার এলাকার নাম, উপজেলা, জেলার তথ্য দিতে হবে। মনোনয়নপত্রে আরো যেসব তথ্য দিতে হবে-
১. প্রার্থীর পক্ষে প্রস্তাবকের নাম ও ভোটার নম্বর, সমর্থকের নাম ও ভোটার নম্বর, প্রস্তাবক ও সমর্থকের স্বাক্ষর।
২. মনোনয়নপত্রের সাথে দেয়া হলফনামার মধ্যে প্রার্থী নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আয়ের উৎস ও দায়ের বিস্তারিত তথ্য, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দিতে হবে।
৩. হলফনামার মধ্যে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সে সম্পর্কিত নথি, বর্তমানে বা অতীতে কোনো ফৌজদারি মামলা থাকলে সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যও দিতে হবে।
৪. নির্বাচনে যে অর্থ ব্যয় করবেন, তার উৎসের বিবরণ, নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম, আয়করের তথ্য, সম্পদ ও দায় এবং বাৎসরিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব, সম্পদের বিবরণী সম্বলিত রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ কপি সংযুক্ত করতে হবে।
৫. যে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাবেন সেই দলের মনোনয়নের কপি সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে।
৬. স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ১৯৭২ এর ১২ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দলিলাদি সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে।
৭. জামানত হিসেবে জমাকৃত ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালান বা রশিদের কপি জমা দিতে হবে।
৮. পূর্বে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
৯. এর আগে নির্বাচিত হয়ে না থাকলে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তিনি যে নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রার্থিতা করবেন তার নাম ও নম্বর উল্লেখ করে ওই এলাকার এক শতাংশ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্ত করতে হবে।
১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৪ নম্বর বিধান অনুসারে মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাছাইয়ের পর সেটি বাতিল বা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন রিটার্নিং অফিসার। যেসব কারণে একজন সংসদ সদস্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে-
১. মনোনয়নপত্রে যেসব তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে- সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ না করলে।
২. প্রার্থীর নামে ফৌজদারি মামলা থাকলে বা প্রার্থী সে তথ্য গোপন করলে।
৩. প্রার্থী অভিযুক্ত আসামি হলে।
৪. প্রার্থী ঋণ খেলাপি হলে।
৫. এমনকি প্রার্থী মনোনয়নপত্রে ভুলবশত: স্বাক্ষর না করলে।
৬. মনোনয়নপত্র অসম্পূর্ণ থাকলে।
রিটার্নিং অফিসারের বিবেচনায় একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও সেই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য কিছু বিকল্প থাকে। প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রাথমিক পর্যায়ে আপিল করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন যদি প্রার্থীর আবেদন বাতিল করে দেন, তখন প্রার্থী হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবেন। হাইকোর্ট যদি তার আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
স্বাআলো/এসএ