সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ালে বিএনপিকে ছাড় দেয়া হবে না, হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে কোনো অগ্নিসংযোগ বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতসহ আরো অনেকেই মাঠে নামতে চায়। আন্দোলন করুক এই ব্যাপারে আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার ঐ রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে বা কোনো ধরনের দুর্বৃত্ত পরাণতায় জড়ায় আমরা কিন্তু ছাড় দেবোনা। এটাই বাস্তবতা।

শনিবার (২১ অক্টোবর) নবনির্মিত ১৫ বিশিষ্ট বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন পরবর্তী আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এ আয়োজন করে।

এরআগে সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় নবনির্মিত অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১৫ তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন উদ্ধোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত জেলায় জেলায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং মামলা চলমান রয়েছে সে মামলাগুলো দ্রত সম্পন্ন করতে হবে। আইনজীবী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে এটা আমার অনুরোধ। কারণ, এদেরকে যদি সাজা না দেওয়া যায় এরা এত অন্যায় করেছে যেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই সবথেকে বেশি নির্যাতিত। তাহলে তাদের শাস্তি হবে না কেন? কেন তাদের বিচার কাজ দ্রুত হবেনা। সে ব্যাপারে আপনাদের অবশ্যই নজর দিতে হবে। কারণ, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।

অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধুর আইনি দর্শন’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় এবং পরে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পিরা সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।

আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।

আরো বক্তৃতা করেন, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহবায়ক এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ. এম. আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজীবুল্লাহ হিরু প্রমুখ।

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারোয়ার স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন বহুতল নবনির্মিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনটি তৈরিতে ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

আইন ও বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে, গণপূর্ত অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ও স্থাপত্য অধিদফতরের নকশায় ভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত অফিস স্পেস, মিটিং রুম, দুটি কনফারেন্স রুম, রেকর্ড রুম, স্টোর রুম, ওয়েটিং এরিয়া, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, এক্সিবিশন স্পেস, রিসিপশন, রেজিস্ট্রেশন রুম, ব্যাংক, অ্যাকাউন্টস সেকশন, আইটি সেকশন ইত্যাদি। আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ কক্ষ, পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল কক্ষ, সুপরিসর মাল্টিপারপাস হল, নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ রয়েছে। এছাড়া টিভি লাউঞ্জ, কিচেন ও ডাইনিং হলসহ শতাধিক আইনজীবীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভবনটিতে চারটি লিফট, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং পুরুষ-নারী-প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক শৌচাগার রয়েছে। প্রকল্পে আরবরিকালচারের মাধ্যমে ল্যান্ডস্কেপিং করা হয়েছে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাবস্টেশন ও জেনারেটরের মাধ্যমে পৃথক বৈদ্যুতিক লাইন সংযুক্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

মানুষের কল্যাণে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিচার বিভাগ এবং আইনজীবীদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা না হয়। স্মার্ট জুডিসিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিসিয়ারি চালু করেছি। জেলে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করে দেয়া হয়েছে।

আগামীতে জেলায় জেলায় আইনজীবীদের জন্য বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ তার সরকার নেবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সাথে সাথে আমার একটি অনুরোধ থাকবে আপনারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের কল্যাণ ফান্ড, যেটা জাতির পিতা করে দিয়েছেন, আমিও বিভিন্ন সময় দিয়েছি, সেটাতে আমি আরো ৩০ কোটি টাকা দেবো। আপনারাও সাধারণ আইনজীবীরা এতে কন্ট্রিবিউট করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হবো, ততবেশি আইনজীবী থেকে শুরু করে সবার জন্য সুযোগ অবারিত করে দিতে পারবো। আসুন সবাই মিলে সেই বাংলাদেশ গঠনে কাজ করি। আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যেন সাজা পায় সে জন্য কাজ করবেন।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন। এজন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিলো, আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, দুর্নীতি করতেতো আসিনি। পরে এটা আদালতে মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি একটি দাবি আছে, আইনজীবী ভবন করে দেয়ার। আর্থিকভাবে যত সচ্ছলতা আসবে, ধীরে ধীরে সব জেলায় এটা করে দিতে পারবো। তবে এখানে একটা শর্ত আছে, সেখানে আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও ফান্ড থাকতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড গঠন করেন, সেখান আপনারাও কিছু দেন আমিও দেবো।

তিনি বলেন, একেবারে নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত দেশের সকলেই যেন ন্যায় বিচার ও উন্নত জীবন পায়, দারিদ্র্যমুক্ত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। আমাদের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে বিএনপি সরকারের আমলে যেখানে ৪১ শতাংশ ছিলো দারিদ্র্যের হার, আমরা তা কমিয়ে ১৮ দশমিক সাত ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেখানে ২৫ দশমিক পাঁচ ভাগ ছিলো, সেটা কমিয়ে আমরা মাত্র পাঁচ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ কেউ এ দেশে হতদরিদ্র, ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়েছি। আজকে চাল উৎপাদন বা দানাদার শস্য প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টনের মতো এখানো আমাদের মজুত আছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার ৯ মাসের মাথায় কেবল একটি সংবিধানই আমাদের দেন নাই ’৭২ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার এ্যন্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২’ জারি করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে তাদের জন্য ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ করেন এবং ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড গঠন করে দেন। তিনিই পাকিস্তান আমলের আইন পরিবর্তন করে নারীদের বিচার বিভাগে অন্তভূক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে যান। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তার নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৯৬ পরবর্তিতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে প্রথম উচ্চ আদালতে নারীদের বিচারক হবার ব্যবস্থা এবং দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পদক্ষেপ জাতির পিতাই শুরু করে যান। সমুদ্র সীমা নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শুরু করেছিলেন।

১৯৭৫ এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেঈমান মোশতাক ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু টিকতে পারেনি। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসেন জিয়া। ক্ষমতা দখল করেন। একাধারে সেনাপ্রধান আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতির ঘোষণা করেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করে নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করেন।

খুনিদের জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসায়। বাবা-মা হত্যার বিচার চাইতে পারবেন না, খুনীরা ক্ষমতায়, এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর ১৯৮১ সালে একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করেন তিনি।

তিনি বলেন, সে সময় আমি দেশে ফিরে দেখি ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার উচ্ছ্বিষ্ট বিলিয়ে কিছু লোকের ভাগ্য উন্নয়ন করেছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াই। মানুষের কষ্ট দুর্দশা দেখি। পরে ২১ বছর পর আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১ এ বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছিলো। তারা দেশের অর্থপাচার করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছে। সারাদেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। তারা দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করেছিলো। আর আজকে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। কোনোদিক থেকে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

সরকার স্যাংশন, ভিসানীতি কেয়ার করে না : কাদের

ঢাকা অফিস: সরকার কোনো রকম স্যাংশন বা ভিসানীতির কেয়ার...

সন্ত্রাস করলে কোনো ছাড় নয়: বিএনপিকে কাদের

ঢাকা অফিস: বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি...

ডোনাল্ড লুকে নিয়ে উদ্ভট চিন্তা করছে বিএনপি: কাদের

ঢাকা অফিস: যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী...

ডোনাল্ড লু আসার খবরে বিএনপি চাঙা: ওবায়দুল কাদের

ঢাকা অফিস: যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী...