চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষককে ছাত্রের চড়, বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা

দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার আল-আমিনের ছেলের সাইফুল আমিন শীর্ষ পরীক্ষা চলাকালীন অসদুপায় অবলম্বন করছিলো। সে কাজে বাঁধা দেয়ায় ওই শ্রেণিকক্ষে দায়িত্বরত বাংলা বিভাগের সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমানের দুই গালে চড় মেরে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে শহরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করে একটি বিবৃতি দিয়েছে।

এ ঘটনাটি রবিবার (৮ অক্টোবর) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে ঘটলেও এদিন রাতে চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান সদর থানায় এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের ১১২ নম্বর কক্ষে এসএসসি নির্বাচনি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী শিক্ষক হাফিজুর রহমান। পরীক্ষা চলাকালীন এ বিদ্যালয়ের প্রভাতী শাখার দশম শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থী সাইফুল আমিন শীর্ষ, তার পিতার নাম সরদার আল-আমিন, শীর্ষ পরীক্ষার হলে অসদুপায় অবলম্বন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এমন অবস্থায় দায়িত্বরত শিক্ষক বাঁধা প্রদান করায় ওই শিক্ষার্থী, শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পরীক্ষার্থী সাইফুল আমিন শীর্ষ পরীক্ষা দেয়ার সময় অসদুপায় অবলম্বন করলে তার খাতাটি দায়িত্বরত শিক্ষক কেড়ে নেয়। এরপর তাকে শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। সে সময় শিক্ষক তাকে দুই কাঁধ চাপ দিয় তার আসনে বসিয়ে দিতে গেলেও সে বসে না। তারপর শিক্ষার্থী শীর্ষ ওই শিক্ষকের সামনে পেছনে হাত রেখে দাঁড়ায়। ওই সময় কথা বলার পরপরই সে শিক্ষকের দুই গালে ডান ও বাম হাত দিয়ে চড় মেরে পালিয়ে যায়। এরপর লাঞ্চিত শিক্ষক খাতাটি নিয়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে যায়।

চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমান বলেন, এ বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এ ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি থানায় অভিযোগপত্র দিতে পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। শিক্ষককে চড় মেরে ছাত্রটি গর্হিত অপরাধ করেছে, সে কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রের ছাত্রত্ব রাখবে কিনা?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষকদের হাত থেকে যেদিন বেত কেড়ে নেয়া হয়েছে, তারপর থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। এটা তারই প্রতিফলন।

তিনি বলেন, ঘটনার পর শিক্ষকদের আর শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা যায়নি। তাদের দাবি, যতদিন দোষী ছাত্রের বিচার না হবে ততদিন তারা ছাত্রদের পড়ানো বন্ধ রাখবে।

তিনি জানান, এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত  দল গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত দলের সদস্যরা হলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন ও তিনি নিজে।

চুয়াডাঙ্গার সবচেয়ে সমালোচিত ঘটনার সংবাদ সোমবার (৯ অক্টোবর) স্থানীয় চারটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত না হওয়ায় জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই সংবাদপত্র বর্জন করার জন্য তারা ফেসবুকে নানান নেতিবাচক মন্তব্য করেছে।

এদিন দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রীরা প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না নিলে সমিতির পক্ষ থেকে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

২১ মে ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা

ঢাকা অফিস: আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের...

চুয়াডাঙ্গার কাঠপট্টিতে অগ্নিসংযোগ, মূল আসামি সোনা আটক

জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: জেলার জীবননগর উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন...

ফোর্বসের ‘৩০ অনূর্ধ্ব ৩০’ এশিয়া তালিকায় ৯ বাংলাদেশি

ঢাকা অফিস: এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে যারা পরিবর্তন আনছেন এবং...

চুয়াডাঙ্গায় আম সংগ্রহ শুরু

জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: ৩০ হাজার ৮১০ মেট্রিকটন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা...