বইমেলার দ্বার খুলবে আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: ভাষার মাসের প্রথম দিনে আজ অমর একুশের বইমেলার দ্বার খুলবে। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের এ মেলায় থাকছে কবি, লেখক, সাহিত্যিকের বইয়ের বিপুল সম্ভার।

পাঠক, বইপ্রেমী, লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশকদের পদচারণায় মাসব্যাপী মুখরিত থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ।

প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে বিপুল কর্মযজ্ঞের পর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বরে দৃষ্টিনন্দন, সুবিন্যস্ত করে সাজানো হয়েছে প্রায় এক হাজার ইউনিটের স্টল, প্যাভিলিয়নসহ অন্যান্য পরিষেবার অস্থায়ী স্থাপনা। এবারও বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই, গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।

বইমেলায় হামলার হুমকি নেই, বিতর্কিত বই প্রকাশ হলে ব্যবস্থা: ডিএমপি

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম-২’ বইসহ কয়েকটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন সরকারপ্রধান। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।

চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি, বৃহস্পতিবার শুরু একুশে বইমেলা

উদ্বোধনের পরই সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ৪০তম বইমেলার দ্বার। একটানা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত? সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বইমেলা। শুধু ছুটির দিন প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। এ দুইদিনে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় মূলমঞ্চে সেমিনার, সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না।

২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা সকাল ৮টায় শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে গুণমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ ও শৈল্পিক বিচারে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ভালোমানের শিশুতোষ সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একজন প্রকাশক পাবেন ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’। নান্দনিক স্টলের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান পাবে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’।

জাতীয় সংসদে মাশরাফিসহ হুইপ হলেন যারা

এবারে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় বিস্তৃত থাকছে বইমেলা। গেল বারের চেয়ে অংশ নেওয়া প্রকাশনা সংস্থা ৩৪টি বেড়ে যাওয়ায় এবার ইউনিট বেড়েছে ৩৬টি। সব মিলিয়ে ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯৩৭টি ইউনিট। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আটটি সংস্থা ও ইউনিট বেড়ে গিয়ে ১২০ প্রতিষ্ঠানের ১৭৩টি ইউনিট থাকছে। একইভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৬টি এবং ইউনিট বেড়েছে ২৮টি। এতে উদ্যানে ৫১৫টি প্রকাশনার থাকছে ৭৬৪টি ইউনিট। তবে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা এবার হয়েছে ৩৭টি। যার একটি একাডেমি প্রাঙ্গণে বাকি ৩৬টি থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। অবশ্য উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছে গাছতলায় স্থানান্তরিত লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে স্টল ১৭টি বেড়ে এবার থাকছে ১৭০টি।

শেখ হাসিনাকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

মেট্রোরেল স্টেশন থাকায় আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তন এনে এবার ‘বাহির পথ’ খানিকটা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে টিএসসি, দোয়েল চত্বর, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশ ও এমআরটি বেসিং প্ল্যান্টসহ সব মিলে আটটি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রাখা হয়েছে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে এমনভাবে বিন্যাস করা হয়েছে যাতে আগত পাঠক ও ক্রেতাদের মনোযোগ বিঘ্নিত না হয়। এবারও বড় পরিসরে শিশুচত্বর রাখা হয়েছে মন্দির গেটের কাছাকাছি।

এবার বইমেলা থাকবে পলিথিন ও ধুমপানমুক্ত। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে পুলিশ, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তিন শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রবেশ ও প্রস্থানপথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ে থাকছে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

বইমেলা ঘিরে নাশকতা ও জঙ্গি তৎপরতার অতীত ঘটনা রয়েছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই এবারের বইমেলায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

এবারো ফলের ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, আবেদন শুরু ২২ জানুয়ারি

বুধবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলার প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বইমেলা অসাম্প্রদায়িক আয়োজন। বইমেলার এই আয়োজন নিয়ে আমাদের বিভিন্ন সময়ে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এবার সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই।’

বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু বইয়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। এবার এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কিনা, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনো বইয়ের লেখার বিষয়টি বাংলা একাডেমি দেখে থাকে। তবে কোনো লেখা বা বিষয় যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে যা পাঠকের নজরে আসে বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং সেটি নিয়ে যদি সমালোচনা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন বইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লোকের সমাগম হয় বইমেলায়। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য আর্চওয়ে, ওয়াচ-টাওয়ারসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। সাদা পোশাকেও কাজ করবে পুলিশ।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ব্যাপকভাবে পেতে শুরু করেছে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা...

যে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দই থাকছে

ঢাকা অফিস: গত ৪ মার্চ আয়কর আইনের বিধান অনুসারে...

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

ঢাকা অফিস: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার...

৫৩৮ হজযাত্রীর টাকা নিয়ে এজেন্সি মালিক উধাও

ঢাকা অফিস: রিসান ট্রাভেলস ও দিয়া ইন্টারন্যাশনাল নামের দুই...