বিদ্যালয়ের আড়াই একর জমি বেদখল

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই একর ৫৮ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন ধরে বেদখলে।

বিদ্যালয়ের পাশে বিভিন্ন মৌজায় ওই আবাদি জমি দখল করে রেখেছেন জমিদাতাদের উত্তরাধিকারীরা। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় জমি উদ্ধারের চেষ্টা চালালেও তাতে সফল হয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭০০ এবং শিক্ষক ও কর্মচারী ২৩ জন রয়েছে।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় স্থানীয় লোকজন বুড়িমারীসহ বিভিন্ন মৌজার জমি দান করেন। দলিল ও রেকর্ডমূলে বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ৭ একর ১৯ শতাংশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ বিদ্যালয়ের জমিতে ৬ নম্বর সেক্টরের সদর দফতর স্থাপন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে বিদ্যালয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ জমি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। ২০১১ সালের দিকে বিনা মূল্যে এই জমি দলিল করে দেয়া হয়। ওই জমিতে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের ভবন-মাঠসহ মূল ক্যাম্পাস বুড়িমারী মৌজায় এক একর ৬১ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বাকি জমি পাশের ইসলামপুর, উফারমারা ও জাহামুদ্দিন মৌজায় অবস্থিত। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দুই একর ৫৮ শতাংশ জমি বেদখলে আছে।

এর মধ্যে বুড়িমারী মৌজার দাতা নজরুল ইসলামের দেয়া ৭০ শতক জমি শুরু থেকে দখল করে রেখেছেন তার ছেলে গোলাম মোস্তফা। অন্যদিকে উফারমারা মৌজার ৯১ শতক জমিদাতা আজিজুল ইসলাম প্রধান।

দাতার এ জমিও প্রথমে ছেলে আতাউর রহমান প্রধান (মৃত) পরে তার স্বজনেরা ৬৮ শতক দখল করে রেখেছেন। এ ছাড়া দাতা শহীদুল্লা মাস্টারের ছেলে ফরহাদ হোসেন ৪৩ শতক, দাতা জাহামুদ্দিনের ছেলে আছির উদ্দিন আহমেদ ৫৪ শতক এবং দাতা তছির উদ্দিনের ছেলে কমির উদ্দিন মাস্তার ২৩ শতক জমি দখল করে রেখেছেন।

এসব ফসলি জমির বর্তমান বাজার মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা। জমি উদ্ধারে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক ২০০৭ সালে উপজেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দখলদারদের নোটিশ দেন। কিন্তু তারা জমি ছাড়তে রাজি হননি।

জমি দখলের ব্যাপারে মেহেদী হাসান বলেন, আমার বাবা (গোলাম মোস্তফা) অসুস্থ। চাচারা জানিয়েছেন, দাদার অনেক জমি ছিলো। কিছু জমি বিদ্যালয়ে মৌখিকভাবে দিতে পারেন। এর কোনো দলিল নেই। জমির দলিল আমাদের কাছে আছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত দলিল নিয়ে এলে জমি ছেড়ে দেবো।

প্রয়াত জমিদাতা আতাউর রহমান প্রধানের ছেলে আবু মান্নান আতিকুজ্জামান প্রধান বলেন, কোন জমি কোথায় আছে বলতে পারবো না। আপনাকে জেনে জানাবো।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম খন্দকার বলেন, জমি উদ্ধার করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফলতা আসেনি। এরপরও তিনি ওই জমি উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পাটগ্রামের নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, এখানে তিনি নতুন যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। কাগজপত্র দেখে জমি উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

অনুমোদন পেলো দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি

ঢাকা অফিস: নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য দুই লাখ ৬৫...

লালমনিরহাটে অগ্নিকান্ডের পুড়ে গেল ২৫টি দোকান

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট: জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে...

তিস্তা রেলসেতুতে নাট-বল্টুর পরিবর্তে গাছের শুকনো কাঠ

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট: জেলা তিস্তা রেলসেতুর বেশিরভাগ জায়গায় নেই নাট-বল্টু।...

পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে...