সম্পদকীয়: ইট ভাটা কর্তৃক টপ সয়েল (মাটির উপরিভাগের অংশ) কাটা নিয়ে হালে বেশ চেচামেচি হচ্ছে। এজন্য মিডিয়ার চেচামেচিটা বেশি। এই মাটি কাটলে অদূর ভবিষ্যতে জমি ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন, টপ সয়েল রক্ষার বিকল্প হিসেবে নদ-নদী বা খালের মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা বলেছেন, নদ-নদীর মাটি ভাটায় ব্যবহার করা হলে ইট তৈরির জন্য মাটির ঘাটতি দেখা দেবে না। আর এতে নদী খননে ২৫ শতাংশ ব্যয় কমবে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হবে।
বর্তমানে জাতীয় প্রয়োজনে সরকার নদ-নদী খননের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নদী খননের মাটি একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। খননকৃত মাটি ফেলার জায়গা না থাকায় নদীর ভেতরই ওই মাটি ফেলা হয়। এতে বৃষ্টির পানিতে ওই মাটি ধুয়ে আবার নদীর মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ নদী খনন করে সরকারি টাকার অপব্যয় ছাড়া আর কিছু হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করে বলেছেন, নদ-নদীর মাটি ভাটায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহারে করা হলে একদিকে ভরাট নদী খনন হয়ে যাবে অন্য দিকে টপ সয়েল রক্ষা পাবে। মূলত মাটির ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটারকে টপ সয়েল বলা হয়। ফসল উৎপাদনের জন্য গুরুত্ব রয়েছে এই মাটির অংশের। মাটি বিজ্ঞানীরা বলেছেন এক সেন্টিমিটার তৈরি হতে হাজার হাজার বছরও সময় লাগে। একবার এই টপ সয়েল নষ্ট হলে নিয়মিত পরিচর্যার পরও সময় লাগে অনেক দিন। ফসলের শেকড় মাটির উপরিভাগের স্তর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে। এই নষ্টের কারণে উর্বরতা বলতে আর খিছু থাকবে না। এতে উৎপাদন কমে গিয়ে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
ভূমি সন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া আছে, ফসলী জমির মাটি কাটা যাবে না। যদি বিশেষ প্রয়োজনে কেউ মাটি কাটতে চায় তাহলে মাছ চাষ করা যায় এমন গভীর করে কাটতে হবে। শুধু তাই নয় কাটা জায়গার দুইপাড় বেধে দিতে হবে। আপন ভালো পাগলেও বুঝলেও কৃষক বুঝতে চাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি তার ভালো-মন্দের কথাটা। নদী খননের স্বার্থে, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য সংকট মোকাবেলায়,পরিবেশ রক্ষায় টপ সয়েল কাটা বন্ধ করে নদ-নদীর মাটি দিয়ে ইট তৈরির ব্যবস্থা জরুরীভাবে নেয়া দরকার।
স্বাআলো/এস