যশোরে হরতালের গরমে শীতের আমেজ!

সকাল সাড়ে আটটা। হরতালের সকাল। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মনে হয়েছিলো যশোর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হরতালের চিরচেনা পিকেটিং দেখা যাবে। রাস্তায় এসে শীতের হালকা আমেজ গায়ে লাগলো। খানিক এগোতেই পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারলাম বের হওয়ার সময়ে চিন্তার সাথে মাঠের চিত্র ভিন্নই হবে।

শহরের ফায়ার সার্ভিস এন্ড ডিফেন্স অফিসের সামনে দিয়ে নব কিশলয় স্কুলের সামনে এসে ছোট্ট একটা যানজটের মধ্যে পড়লাম। দৃশ্যত, সেটি শিশুদের স্কুলে পৌঁছে দিতে অভিভাবকদের জটলার একটি খণ্ডচিত্র ছিলো। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে কোর্ট মোড় হয়ে সামনে এসেই গোটা দশেক পুলিশের দেখা পেলাম। তারাও বরাবরের মতো রিকশা-ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যস্ত। সেখান থেকে পোস্ট অফিসের সামনে দিয়ে গেলাম বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে । এসে দেখি সেখানে শুনশান নিরবতা। কার্যালয়ের দুটি দরজা বড় বড় দুটি তালা লাগানো। পাশেই অপেক্ষমান গুটিকয়েক পুলিশ সদস্য খোশগল্পে আছেন। এগিয়ে হরতালের খবরাখবর জানার চেষ্টা করলাম। এক পুলিশ কর্মকর্তা তো বলেই ফেললেন, ‘এখানে কেউ আসে নাকি! আসলে তো পিটিয়ে বের করে দেবো।’ বুঝলাম বিএনপির হরতাল মোকাবেলায় পুলিশের বেশ প্রস্তুতি রয়েছে। হয়তো তেমন নির্দেশনাও মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের শীর্ষ কর্মকর্তারা দিয়েছেন।

যশোরে বাস্তবায়ন হবে না হরতাল, নাশকতা করলে প্রতিহত করা হবে

মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে লালদীঘির অপর পাশে আসতেই দেখি শ্রমজীবী মানুষের ভিড়। তারা নিত্যদিন সকালে হাজির হন এখানে। শহরের কর্তারা বাড়ির কাজের জন্য তাদের ভাড়া নেন। ‘ক্ষমতার দখল আর ধরে রাখার লড়াইয়ের তাদের কোনো লাভ নেই। নিতান্তই খেটে খাওয়া মানুষ তারা। কাজ না করলে ভাত জুটবে না।’ বলছিলেন রামনগর ইউনিয়ন থেকে আসা সুমন মিয়া নামে এক শ্রমজীবী।

তাদের সাথে কথা সেরে এগিয়ে গেলাম সামনে। সোনালী ব্যাংকের পাশ দিয়ে চার খাম্বার দিকে যাচ্ছি। বরাবরের মতো রেল রোডে ইজিবাইক-রিকশা চলছে পর্যাপ্ত। সামনে চার খাম্বায় গিয়ে দেখি পরনে দারিদ্র্যের ছাপ থাকা মধ্যবয়সী নারীরা দীর্ঘ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে ব্যাগ দেখে বুঝতে বাকি রইলো না টিসিবি চাল পেতে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। যদিও দোকান তখনো খোলেনি।

গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে তাদের কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ মারা গেছেন দুইজন। এছাড়া ৪০ জন পুলিশ সদস্য ও ২৫ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, বিনাকারণে তাদের সমাবেশে হামলা করেছে পুলিশ। যার প্রতিবাদে গতকাল রাতেই বিএনপির পক্ষ থেকে সারাদেশে রবিবার সকাল সন্ধ্যা হরতালের আহবান করা হয়। কিন্তু সকালে যশোরের রাজপথে বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। যদিও গতকাল শনিবার বিকালেই যশোরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ পৃথক পৃথকভাবে হরতালবিরোধী মিছিল করে বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছেন, হরতালের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তারা রাজপথে বিএনপিকে জবাব দেবেন।

বিএনপি হরতালের ঘোষণা দিলেও মাঠে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। এই চিত্র কেনো? এটা সম্ভাব্য তিনটি কারণ হতে পারে। একটি, আওয়ামী লীগ নেতাদের হুংকার। দ্বিতীয়টি, সাধারণ মানুষ হরতাল নামক ‘বস্তুটিকে’ প্রত্যাখ্যান করা। আর তৃতীয়টি, হতে পারে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ ঢাকায় অবস্থান করা। এর কোনটির কারণে যশোরে হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি তা আরো কয়েকদিন পর পরিষ্কার হবে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

চৌগাছায় শামীম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শামীম...

যশোরের কাশিমপুর ও লেবুতলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী বিপুলের নির্বাচনী পথসভা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ও লেবুতলা ইউনিয়নে...

যশোরে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, আটক ১

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ঝাঁপার জোকা গ্রামে পুলিশ...

যশোরে ফাতেমা আনোয়ারকে যুব মহিলা লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলীয় শৃঙখলা ভঙ্গের অভিযোগে অবশেষে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার...